দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)-এর পদ খালি রাখায় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বসানোর চিন্তা করছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, প্রায় ৫ মাস ধরে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ খালি রয়েছে। এই শূন্যস্থান পূরণে ডিএসই কর্তৃপক্ষ দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফায় আবারও এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিএসই। গত ১০ ডিসেম্বর দেয়া এ বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহীদের ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির সূত্রটি বলছে, দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও যোগ্য এমডি না পাওয়ায় ডিএসইর মতো প্রতিষ্ঠানকে এমডি ছাড়া চলতে হচ্ছে। যা দেশের শেয়ারবাজারের সুনাম নষ্ট করছে। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না কমিশন। তাই তৃতীয় দফায় এমডি পাওয়া না গেলে, কমিশন শেয়ারবাজারের স্বার্থে নিজেই প্রশাসক বসাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পর ডিএসইর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৯ জুন নিয়োগ পান কে এ এম মাজেদুর রহমান। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ জুলাই। তার পর থেকেই পদটি খালি রয়েছে।

ডিএসইতে এমডি পদে যোগ দেয়ার পর বিদেশ ভ্রমণ, কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা বিতর্কের জন্ম দেন মাজেদুর রহমান। এরপরও ডিএসইর পর্ষদ থেকে মাজেদুর রহমানকে এমডি পদে পুনরাই নিয়োগ চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করা হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসইর ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। এর প্রেক্ষিতেই নতুন এমডি খোঁজা শুরু করে ডিএসই।

এ লক্ষ্যে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেন। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)।

এরপরে গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোজেঁ বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এক্ষেত্রে আবেদন করেছিল ৩ জন। অর্থাৎ দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল।

দুই দফায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে গত ২ অক্টোবর ৭ জন প্রার্থীকে সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়। পরবর্তীতে ৭ জনের মধ্যে ৩ জনকে নিয়ে শর্ট লিস্ট করা হয়। যাদেরকে গত ৬ অক্টোবর ডিএসইর পর্ষদ ডাকে। তবে ওই ৩ জনের মধ্যেও কাউকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য যোগ্য মনে করেনি পর্ষদ।

এ কারণে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় যোগ্য এমডির খোঁজে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

আগের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফার বিজ্ঞপ্তিতেও এমডি পদে আবেদনের জন্য যোগ্যতা হিসেবে বিজনেস, ইকোনোমিকস, স্ট্যাটিসটিকস, ম্যাথমেটিকস অথবা আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে।

আর প্রফেশনাল ডিগ্রি সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস, সিপিএ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। তবে ক্যাপিটাল মার্কেটের ওপরে আন্তর্জাতিক দক্ষতা সম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আবেদনের সময় দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয়েছে।

সূত্র মতে, আগের দু’দফা বিজ্ঞপ্তির আলোকে অধ্যাপক, ব্যাংকার, নন-ব্যাংকার এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসহ বিভিন্ন খাতের ১৯ জন আবেদন করেছিলেন। এর মধ্য থেকে ডিএসইর নিয়োগ বোর্ড সাক্ষাতকারের জন্য ৭ জনকে মনোনীত করেছিল। ৭ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক এমডি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ব্যাংকার, নন-ব্যাংকার, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট এবং এফসিএ ছিলেন।

এদিকে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এমডি নেই ৬ মাসের বেশি সময় ধরে। এই শূন্যস্থান পূরণে ইতোমধ্যে হাত দিয়েছে বিএসইসি। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে চলতি বছরের ৩১ মে এম সাইফুর রহমান মজুমদারের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে সিএসইর এমডির পদটি শূন্য রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ দিতে পারেনি। এ জন্য কমিশন সিএসইকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি কি কি সুবিধা পাবে, তা জানতে চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছে।