দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলে নারী নেতৃত্ব আরও বাড়ানো হবে। কারণ ২০২০ সালের মধ্যে দলের এক-তৃতীয়াংশ পদে নারী নেতৃত্বের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনে এ প্রস্তাবটিও দিয়েছিল স্বয়ং আওয়ামী লীগ। তাই এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার চেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ বেশি করছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, ২০-২১ তারিখের সম্মেলনের মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্তি এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি বাদ পড়তে পারেন বর্তমান কেউ কেউ। আবার সিনিয়রদের কারও কারও স্থান হতে পারে উপদেষ্টা পরিষদে। নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা কাজ করছি।

২০১৬ সালের আগে আমাদের কমিটিতে নারী নেতার সংখ্যা ছিল ১০ জন। বর্তমান কমিটি রয়েছে ১৫ জন। এবার নির্বাচন কমিশনের সেই নীতিমালার মধ্যে থাকার চেষ্টা করা হবে। এ কারণে দলে অনেক নারী নেত্রীকে স্থান দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের বর্তমান কমিটিতে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ নারী নেত্রী রয়েছেন ১৫ জন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুন।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন ডা. দীপু মনি। দলের সম্পাদক পদে আছেন পাঁচ নারী। তাদের মধ্যে কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে আছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে সিমিন হোসেন রিমি, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান ও মারুফা আক্তার পপি।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, অতীতের মতো এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিতে যোগ হতে পারেন বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী। অতীতে যারা দলের জন্য অবদান রেখেছেন তাদেরই বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। এ ছাড়াও যারা বিভিন্ন সেক্টরে দলের জন্য কাজ করছেন এমন নারী নেত্রীদেরও স্থান দেওয়া হতে পারে। সেই হিসেবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, আইনজীবী, পেশাজীবী সংগঠন থেকেও নারী নেতৃত্ব আসতে পারেন। বর্তমান কমিটিতে যারা আছেন তাদের কয়েকজনের পদোন্নতি হতে পারে। এ ছাড়াও বয়োজ্যেষ্ঠদের দলের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হবে। নতুন নারী নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনায় আছেন মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি রওশন জাহান সাথী।

সাথী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফের সহধর্মিণী। এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেছেন। তৃণমূল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মূল্যায়ন করা হতে পারে। জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সংসদ সদস্য সৈয়দা ডা. জাকিয়া নূর লিপি কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন। আলোচনায় আছেন ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ। আইন পেশায় জড়িত ফারজানা মাহমুদ লেখালেখিতেও পারদর্শী।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত লেখালেখি করেন এই মানবাধিকার কর্মী। এ ছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির সদস্য হিসেবে দলের জন্য বিভিন্ন কাজ করছেন সফলতার সঙ্গে। আলোচনায় আছেন সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত, সাগুফতা ইয়াসমিন, ওয়াসিকা আয়শা খান, মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ, নুরজাহান বেগম মুক্তা,

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. এএফএম আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি, সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের স্ত্রী জেবুন্নেছা হিরন, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আফজল খানের মেয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী রোজিনা নাসরীনসহ আরও অনেকে।

এ বিষয় জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের নারীদের মধ্যে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন নারী নেতৃত্ব পেয়েছি। এ ছাড়াও আমাদের সহযোগী সংগঠন থেকেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পদায়ন করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আরপিওর বাধ্যবাধকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যাশা করছি সঠিক সময়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব আওয়ামী লীগে চলে আসবে। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায়, শুধু দলে নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে।

বর্তমানে বিপুলসংখ্যক নারী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা ভূমিকা রেখে আসছেন। নারীদের এগিয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত।