দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের (ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথকীকরণ) পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা। সাড়ে তিন বছর আগে তিনি ডিএসইর এমডির পদ ছাড়েন। বর্তমানে আছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার হিসেবে। কিন্তু এখনও তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন ডিএসইর গাড়ি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নেয়া তার এমন সুবিধা গ্রহণকে ‘অনৈতিক’ বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএসইসির কমিশনার বিএসইসি থেকেই গাড়ির সুবিধা পাওয়ার কথা। তিনি বর্তমানে ডিএসইতে নেই, তাই তিনি কিছুতেই ডিএসইর গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। তার পরিবারের সদস্যদের জন্যও তিনি নৈতিকভাবে ডিএসইর গাড়ি নিতে পারেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বপন কুমার বালা ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল তিন বছরের জন্য ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই বছরের ৩ এপ্রিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার নিয়োগ অনুমোদন করে। তবে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ রূপান্তরিত হওয়ার পর সিইওর পদটি এমডিতে রূপান্তরিত হলে বালাও ডিএসইর এমডি হন।

তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর ডিএসইর এমডি পদে স্বপন কুমার বালার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল। এরপর একই বছরের ১৮ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিএসইসির কমিশনার হিসেবে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আদেশ জারি হয়। পরের দিনই তিনি বিএসইসির কমিশনার হিসেবে কাজে যোগ দেন।

সূত্র জানায়, ডিএসই ছাড়ার আগেই স্বপন কুমার বালা প্রতিষ্ঠানটিতে একটি বিতর্কিত পদোন্নতি দিয়ে যান। এতে তার আস্থাভাজনরা পদোন্নতি পেলেও বঞ্চিত হন যোগ্য অনেক কর্মকর্তা। ফলে ডিএসইর কর্মকর্তাদের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্বপন কুমার বালা বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় কেউ এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ডিএসই ছেড়ে বিএসইসিতে যোগ দিলেও স্বপন কুমার বালা, তার স্ত্রী ও মেয়ের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রায়ই ডিএসইর গাড়ি সুবিধা নিয়ে থাকেন। বিএসইসিতে যোগদানের পর থেকে তিনি এ অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন।

ডিএসইর একাধিক গাড়িচালকের সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা বললে তারা স্বপন কুমার বালার পরিবারের জন্য ডিএসইর গাড়ি ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। এর মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বরও ডিএসইর একটি গাড়ি (ঘ-৩৩১৭৯৫) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বপন কুমার বালার স্ত্রী শিখাকে সার্ভিস দেয়। ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ছিল। ওই গাড়ির চালকের সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা বললে তিনি স্বপন কুমার বালার স্ত্রীকে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, স্বপন কুমার বালা স্যারের স্ত্রীকে দুপুর ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে নামিয়েছি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কমিশনার হিসেবে তিনি তো বিএসইসি থেকে গাড়ি পাওয়ার কথা। এছাড়া তিনি বর্তমানে ডিএসইতে নেই। তাহলে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য কেন ডিএসইর গাড়ি নেবেন? বিএসইসির কমিশনার পদে থেকে পরিবারের জন্য ডিএসইর গাড়ি ব্যবহার সম্পূর্ণ অনৈতিক।’

ডিএসইর গাড়ি পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহারের বিষয়ে মোবাইলে স্বপন কুমার বালার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না।’ এই বলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ডিএসইর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিএসইসির কমিশনার স্বপন কুমার বালা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রায়ই ডিএসইর গাড়ি নেন, এমন কথা আমরাও শুনেছি। কিন্তু তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমিশনার, এ কারণে কেউ তাকে কিছু বলেন না। আর তিনি গাড়ি চাইলে কেউ না-ও করতে পারেন না।

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনিও ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। পরবর্তীতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্বপন কুমার বালা পরিবারের সদস্যদের জন্য ডিএসইর গাড়ি নেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে ডিএসইর অফিসে কথা বলব।’