দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা বীমা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বর্তমানে তালিকাবহিভূত বীমা কোম্পানি রয়েছে ২৭টি। এর অধিকাংশেরই আর্থিক ভিত্তি দুর্বল। এসব কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৯টি বীমা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির। কোনো কোনো বীমা কোম্পানি ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্তির উদ্দেশ্যে ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়ে বীমা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সম্ভাবনা খুবই কম।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানতে গতকাল বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ওই বৈঠকে ২৭ বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিও অংশ নেন। বৈঠকে ওই ২৭ বীমা কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, মাত্র ৯টি কোম্পানির এখনই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি তুলনামূলক শক্তিশালী। কোম্পানিগুলোর এ সংক্রান্ত রোডম্যাপ পর্যালোচনা করে এমন চিত্রই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে আইডিআরএ।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সক্ষমতা থাকা ৯ কোম্পানির মধ্যে নতুন বীমা কোম্পানি রয়েছে পাঁচটি। এই কোম্পানিগুলো হলো– গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পুরনো কোম্পানি, যেগুলো এখনই তালিকাভুক্ত হতে পারবে।

শর্ত অনুযায়ী বীমা কোম্পানিগুলোর অনুমোদন পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পরও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি ২৭টি বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে পুরনো কোম্পানি ১২টি ও নতুন ১৫টি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তালিকাবহিভূত কোম্পানিগুলোকে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। অন্যথায় বীমা আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। তবে সময় বেঁধে দেওয়ার পরও গত আড়াই মাসে শুধু দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এসইসির কাছে তালিকাভুক্তির আবেদন করেছে।

উল্লেখ্য, পুরনো যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স।

২০১৩ সালে নতুন ১৫টি বীমা কোম্পানির লাইসেন্স দেয় আইডিআরএ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর কয়েকটি কোম্পানি দু’বছর সময় বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু সে সময় পার হওয়ার পরও কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের বাইরেই রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা নতুন জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে আলফা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি গেস্নাবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া নতুন সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স।