দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ২০ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৩টায় দুই দিনের এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। দলের সাড়ে ৭ হাজার কাউন্সিলর ২১ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মাঠে নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য বসবেন।

দলের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনাই আবারও সভাপতি হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত হলেও সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন এটা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। সাধারণ সম্পাদক প্রশ্নে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি জনসাধারণেরও জিজ্ঞাসা-কৌতূহল বেড়েই চলেছে। তবে দলের শেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে বলে দলীয় সূত্র দাবি করছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দলের বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের প্রসঙ্গই প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে।

গত ৩ বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে বৈঠকে। কেন্দ্রের সাথে তৃণমূলের দূরত্ব, কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় গ্রুপিং দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনাসহ আগামী বছর দেশব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন নাকি নতুন কেউ দলের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে আসছেন তার নিশ্চিত কোনও উত্তর নেই কারও কাছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের নাম কয়েক মাস ধরে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ওই পদের জন্য শোনা যাচ্ছে। জাতীয় সম্মেলনের ঠিক ২-৩ দিনে আগে শোনা যাচ্ছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন। আবার দলের অন্য একটি সূত্রের দাবি, দলীয় সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত।

দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে দল ও আদর্শের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এমন কাউকেই এবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

দলের সাধারণ সম্পাদক ইস্যুতে নিজেদের পছন্দের লোককে বানাতে এরই মধ্যে নানা রকম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, সাধারণ সম্পাদক প্রশ্নে কেন্দ্রীয় নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে দলের বেশিরভাগ সভাপতিমণ্ডলির সদস্যই দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকুক এটাই চাচ্ছেন। তাদের মধ্যে দলের দুইজন প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক দলীয় প্রধানের কাছে বিষয়টি তুলেছেন বলেও দলীয় সূত্র জানা গেছে। সম্পাদকমণ্ডলির কয়েকজন সদস্য ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে।

অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন এমন কয়েকজন নেতা মনে করেন দলের সাধারণ সম্পাদক অন্য কেউ আসুক। তারা মনে করেন, দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দলের পদ ও মন্ত্রীত্ব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর কারণ তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও ধানমণ্ডি, নাটক সরণি ( সাবেক বেইলি রোড) সহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে (পক্ষে ও বিপক্ষে) আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

সম্পাদকমণ্ডলির বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন, গত ৩ বছরে সাংগঠনিক কাজে গতি ছিল না। এ কারণেই গত এক মাসে ২৮ জেলায় দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নেতারা বলেন, সামনে ‘মুজিববর্ষ’। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে মুজিববর্ষ উদযাপনে। এখানে দলের দায়িত্ব পালনে কোনও খামতি রাখা যাবে না। এ জন্য দলীয় সাধারণ সম্পাদক এমন একজনকে প্রয়োজন যিনি কাজে গতিশীল হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলির একজন সদস্য বলেন, দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়।

আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ও আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এটা দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা। কিন্তু সেটি নিয়ে যেন কোনও অসুস্থ প্রতিযোগিতা না হয়। যারা নোংরা প্রচারণা করছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। আমরা তার নেতৃত্বের পেছনে থাকব। তিনি যাকে যে দায়িত্ব দেবেন, তা মেনে নিতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায়: সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এর বাইরে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আজমত উল্লা খান ও মায়া চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছেন।