দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার দরপতনের পেছনে মুল কারন গুজব বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। গুজবের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘প্রতিদিন যে পুঁজিবাজারের সূচক নিম্নমুখী হচ্ছে, এটাও একটি রিউমার বা গুজব। পুঁজিবাজারে একেকটা রিউমার আসে, এটা বহুদিন চলে। আবার স্থিতিশীল হয়। এবার এর রিউমার কদিন পর স্টেবল (স্থিতিশীল) হবে তা জানি না।’

গত বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে পুঁজিবাজারের পতন নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকেও (গতকাল) একটি পত্রিকায় দেখলাম, পুঁজিবাজার থেকে সব বিদেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা ধারণা করছেন, এখানে টাকার অবমূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু আমাদের সরকারের কারেন্সি ডিভাল্যুশন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। চলতি বাজেটেও এটি ছিল না, আগামী বাজেটেও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত থাকবে না।’

তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজন ভিন্নভাবে প্রণোদনা দেব। তারপরও আমরা টাকার মান কমাব না। কারণ বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর। টাকার মান কমালে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টাকার মান কমালে অবকাঠামো খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই চেয়েছিল যে, টাকার মান ডলারের বিপরীতে কমানো হোক। তাদের যুক্তি ছিল, এটি হলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু আমরা বলেছি, অন্য যেসব দেশ মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট খাতে প্রণোদনা দেব। তাহলে ওই খাতটি বেগবান হবে। রপ্তানি বাড়াতে আমরা তৈরি পোশাক খাতকে প্রণোদনা দিয়েছি।

আরও দিতে হলে দেব। কারণ টাকার যতই অবমূল্যায়ন করি না কেন, আমাদের আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়বে না। যদি প্লাস্টিক, সিরামিক বা অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট খাতে প্রণোদনার দরকার হয়, তা আমরা দেব।’ সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, অন্য বছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হয়। এবারই প্রথম ব্যাংক থেকে বেশি টাকা ধার নেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটা রিউমার দেখা যাচ্ছে যে, সরকার ব্যাংকগুলো খালি করে ফেলছে। সরকার সব টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার সব টাকা ব্যাংক থেকে নেবে কেন? আমরা আগে টাকা নিতাম দুই সোর্স (উৎস) থেকে। এর মধ্যে মেইন সোর্স ছিল সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট (সঞ্চয়পত্র)।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে সবচেয়ে নিম্নমানের টুলস হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। আমরা সঞ্চয়পত্রের বিপক্ষে নই। আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কিংবা পেনশনারদের জন্য সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছিল। তাদের মুনাফায় আমরা হাত দিইনি। কখনো তাদের সুবিধা কমানো হবে না। কিন্তু এদের নাম করে ধনী সম্প্রদায় সঞ্চয়পত্র কিনে সরকারকে বিপদে ফেললে তা আমরা মানব না। এরা তো ব্যবসা করে বড়লোক হয়। আমরা কেন তাদের বেশি সুদ দেব।’

তিনি বলেন, যাদের জন্য আমরা সঞ্চয়পত্র চালু করেছিলাম, তাদের জন্যই রাখব। আগে যারা এখানে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতেন, তারা এখন ব্যাংকে টাকা রাখবেন। টাকা ব্যাংকে রাখলে এ ব্যবহার বাড়ে। সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখা বালিশে রাখার মতোই। অর্থনীতিতে এর তেমন কোনো প্রভাব থাকে না। কিন্তু এসব টাকা ব্যাংকে রাখলে অন্তত দৈনিক ১০ বার হাতবদল হতো। অর্থনীতি বেগবান হতো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে আমরা ব্যাংক থেকে অনেক টাকা ধার করছি, বাজেটে যে পরিমাণ টাকার ধার করার কথা তার বেশি ধার করা হচ্ছে। আসলে আগে আমরা টাকা বেশি নিতাম সঞ্চয়পত্র থেকে। তারপর প্রয়োজন হলে নিতাম ব্যাংক থেকে। এবার হয়েছে উল্টো। বেশি টাকা নিচ্ছি ব্যাংক থেকে। আর সঞ্চয়পত্র থেকে নিচ্ছি কম টাকা। যেহেতু সঞ্চয়পত্রে কম টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রের সেই টাকা আবার চলে আসছে ব্যাংকিং খাতে।’