দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল শুক্রবার। কাল সম্মেলনের উদ্বোধন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনসহ নানা চমক থাকবে শনিবার কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনে। এবারের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী আগের সাধারণ সম্পাদকই পুনরায় আরেক মেয়াদে নির্বাচিত হবেন নাকি, নতুন কাউকে এবারের সম্মেলনে শেখ হাসিনা রানিংমেট হিসেবে বেছে নেবেন এই চমক দেখার অপেক্ষায় সংগঠনটির তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীসহ দেশবাসী।

এদিকে রাত পোহালেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এবার নেতৃত্বে কেমন চমক থাকবে তা দেখার অপেক্ষায় পুরো দেশ। দলের উচ্চ পর্যায়সূত্রে জানা গেছে, বড় রদবদল হতে পারে দলের প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকীয় পদগুলোয়। যুক্ত হতে পারে নতুন মুখ।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে সভানেত্রী পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দলের সভানেত্রী নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। টানা নবমবারের মতো সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আলোচনা থাকলেও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই স্বপদে থেকে যাচ্ছেন বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে এ পদ নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ আছে। প্রকাশ্যে কেউ প্রার্থী না হলেও দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদের চেয়ারে বসতে প্রেসিডিয়াম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের কেউ কেউ নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হৃদরোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি আবারও এ পদে থাকবেন কিনা, তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা ছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত কয়েক মাসে পুরোদমে ছুটে বেড়িয়েছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। গত এক মাসে ২৮টি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। অধিকাংশটিতেই তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

দলের মুখপাত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শেষ বেলায় বিষয়টি ভালোভাবেই নিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি এখন দায়িত্ব পালনে সক্ষম। একসময় ছাত্রলীগের সভাপতি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতা-কর্মীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে তাঁর। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানান, নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে গঠন করা হবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকীয় পদগুলো। তিন-চার মেয়াদ ধরে একই পদে থাকা অনেক নেতাই এবার বাদ পড়বেন। আবার অনেক নেতারই পদ পরিবর্তন হবে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই চান শুদ্ধি অভিযানের ভিতর দিয়ে হতে যাওয়া সম্মেলনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন হোক।

দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনেও স্বচ্ছতার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। যেসব নেতা ও তাদের অনুসারীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করেছেন, তাদের বাদ দেওয়া হবে। সাংগঠনিক দায়িত্ব পেয়েও যারা ঠিকমতো পালন করতে পারেননি, তাদেরও কমিটিতে ঠাঁই হবে না। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের স্থলে স্থান হবে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর দুঃসময়ে যারা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সামনের সারিতে মাঠে ছিলেন তারা।

শুধু ১৯৮১ সালই নয়, ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১ সালের পর দল ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত যারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন, দলকে সংগঠিত করেছেন, তাদের জন্য এবারের সম্মেলনে থাকছে পুরস্কার। একাধিক সূত্র জানান, এবারের সম্মেলনে দল ও সরকার আলাদা করার একটি আলোচনা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। কারণ দলের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাই মন্ত্রিসভায় থাকছেন। ফলে মন্ত্রীরাও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন।

দলের পরিবর্তন ও মন্ত্রিসভার সদস্য পদে থাকা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই পুরনোদের বিদায় ও নতুনের সংযোজন। অন্যদিকে বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের সরকার। পৃথিবীর কোনো দেশেই সরকারকে দল থেকে আলাদা করতে পারেনি।’

সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে দেখা যেতে পারে- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি তো দেখছি, আমাদের যিনি সাধারণ সম্পাদক আছেন তারই থাকার সুযোগ আছে। এর আগে যারা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তারা দুবার করেই ছিলেন। আর আমাদের সাধারণ সম্পাদকের শরীর তো এখন ভালো। ফলে তিনিই থাকতে পারেন।’

দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এবার কমিটিতে বেশ কয়েকজন তরুণ নেতাকে যুক্ত করা হবে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন। টানা তিন বা চার মেয়াদ ধরে একই পদে আছেন এমন বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়তে পারেন। আটটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দু-একটি ছাড়া অধিকাংশই পরিবর্তন আসতে পারে। কমপক্ষে দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। চার যুগ্মসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একাধিক পদে পরিবর্তন আসতে পারে। কারও কারও স্থান হবে প্রেসিডিয়ামে। কেউ সদস্যও হতে পারেন। দলের নীতিনির্ধারক ফোরামের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান কমিটিতে সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে ১৫ জন নারী আছেন।

নতুন কমিটিতে এ সংখ্যা অন্তত ২০ হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের আইনে ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সে হিসাবে এবারের কমিটিতেই আওয়ামী লীগকে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নারীকে এবার কমিটিতে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।