দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : চামড়া খাতের সব অনিয়মিত ও খেলাপিঋণ দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লক হিসাবে স্থানান্তরিত ঋণে হ্রাসকৃত হারে সুদ প্রয়োগের প্রস্তাবও বিবেচনায় নিচ্ছে সরকার। এ সুবিধা দিতে কত টাকার প্রয়োজন হতে পারে তার একটি আর্থিক প্রাক্কলন (আর্থিক সংশ্লেষ) করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, চামড়াশিল্প খাতে বিদ্যমান অনিয়মিত ঋণ পরিশোধে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড প্রদান এবং ব্লক হিসাবে স্থানান্তরিত ঋণের জন্য ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড বিবেচনায় নিয়ে হ্রাসকৃত সুদের হার প্রয়োগ করা হলে আর্থিক সংশ্লেষ কত হবে তা নিরূপণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর অনুরোধ করা হলো।

এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পর এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক সুবিধা আদায় করছেন চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা। এরই অংশ হিসেবে গত এপ্রিলে অর্থমন্ত্রীর কাছে এক চিঠিতে বেশ কিছু সুবিধা দাবি করে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। এর মধ্যে ছিল এ খাতে বিদ্যমান সব খেলাপিঋণ ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর, দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৬ বছরের জন্য ঋণ পুনঃ তফসিল সুবিধা, ঋণের সুদহার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ঋণের সুদ মওকুফ এবং এ পর্যন্ত অনারোপিত, স্থগিত ও দণ্ড সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ করা। এ ছাড়া রপ্তানিতে বিদ্যমান আর্থিক প্রণোদনা পাঁচ বছরের জন্য বহাল রাখারও দাবি জানায় সংগঠনটি।

জানা যায়, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালেও প্রায় একই রকম সুবিধা দেওয়া হয়েছিল ট্যানারি মালিকদের। শুধু ব্যাংকঋণসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানই নয়, সাভারে চামড়া শিল্প নগরী নির্মাণ প্রকল্পের পুরো ব্যয়ই বহন করছে সরকার। আবার হাজারীবাগের তুলনায় সাভারে ট্যানারি মালিকদের কয়েক গুণ বেশি জমি দিয়ে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে এ খাত ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা পেয়ে আসছে। এ ছাড়া নিজস্ব ইটিপিতে উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেয়ে আসছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প সাভারে স্থানান্তরের বিষয়ে সৃষ্ট ব্যাংকঋণসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ২০০৮ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশ কিছু সুবিধা দিতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে প্রায় একই রকমের সুবিধা দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর পর্যায়ে রয়েছে বা স্থানান্তর হয়ে গেছে, সেসব ট্যানারির অনিয়মিত ঋণ ব্লক হিসাবে স্থানান্তর, গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা প্রদান ও ঋণের জন্য নমনীয় পরিশোধ সূচি নিরূপণ করা যাবে। ব্লক হিসাবে স্থানান্তরিত ঋণের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ আট বছর পরিশোধ সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। এ ধরনের ঋণের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনারোপিত সুদ, স্থগিত সুদ খাতে রক্ষিত সুদ ও দণ্ড সুদ সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করা যাবে।

সূত্র বলছে, ওই সময় অনেক ট্যানারি মালিকই এ সুবিধা নিয়েছেন; কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো এ খাতে খেলাপিঋণ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত এ খাতে বিতরণ করা ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি। অথচ এই ঋণের বেশির ভাগই বিশেষ সুবিধায় মাত্র ৭ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হয়েছে।