দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে দেশের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আলোচিত এই অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। পণ্য ও সেবা খাতে রফতানি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।

মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) সরকারের ১৭তম মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করার পর তা অনুমোদন পেয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ৩ দশমিক ৮৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজায় বিনিয়োগ এসেছে ৩৩২ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার। বেপজার আওতায় ৮টি ইপিজেডে ৪৫৮টি চালু প্রতিষ্ঠানে ১৯ হাজার ৫৪৮ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজার গভর্নিং বোর্ড ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। অর্থবছর শেষ নাগাদ বেজা ৩৩ হাজার ৫৯৪ একর নিষ্কণ্টক জমির ‘ল্যান্ড ব্যাংক’ সৃষ্টি করে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থবছরে শিল্পক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লি ঋণের বরাদ্দ ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বিপরীতে ২৩ হাজার ৬১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৯০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ৮৯৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার মহাসড়ক সার্ফেসিং করা হয়েছে। ১ হাজার ৬৩৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। ১২৮টি সেতু ও ৫৬১টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ (এমআরটি লাইন-৬) মেট্রোরেলের পূর্তকাজের গড় অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ভৌত অবকাঠামোতে অগ্রগতি হয়েছে ৮১ শতাংশ।

যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে একধাপ এগিয়েছে রেল যোগাযোগ। রাজশাহী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস রেল সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বিমানে যুক্ত হয়েছে ২টি ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজ। আলোচিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ নৌপথের প্রায় ১৩৯ দশমিক ৬৩ লাখ ঘনমিটার সংরক্ষণ ড্রেজিং এবং ৪১৫ দশমিক ২ লাখ ঘনমিটার উন্নয়ন ড্রেজিং শেষ করা হয়েছে।

২০১৯ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোম্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্ট ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৮টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন ও ১১০টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন কমপ্লেক্স এবং ৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। টেলিডেনসিটি ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশে এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৫৭ দশমিক ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই অর্থবছরে সাংবাদিকদের জন্য নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশক্রমে ৪৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ৯৪টি হাসপাতালে উন্নতমানের টেলিমেডিসিন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। নওগাঁ, নীলফামারী, মাগুরা, চাঁদপুর ও নেত্রকোনায় ৫টি সরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব শাখার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঢাকা অঞ্চলের একমাত্র নৌ-অপারেশনাল ঘাঁটি বানৌজা শেখ মুজিব কমিশনিং করা হয়েছে। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে ৫টি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। একই বছর ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ২৫২ এবং ৩৭তম বিসিএসের মাধ্যমে ১ হাজার ২২৪ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ১০টি ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ’ ব্রান্ডিং এবং ফ্লাগশিপ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ নিবিড়ভাবে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড, স্পেশাল ডিসটিংকশন অ্যাওয়ার্ড, ভ্যাকসিন হিরো এবং চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ এবং টেগোর পিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে—সংবাদটি নিঃসন্দেহে শুভকর। তবে এই অর্জনকে ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ।’ এই অর্জন ধরে রাখতে হলে জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত দেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দাবি করেন, সরকারের জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করার ফলেই এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আগামীতে এ অর্জন আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।