আবু সাঈদ চৌধূরী, দেশ প্রতিক্ষণ, জবি: নতুন বছরের শুরুতেই কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হওয়ার প্রায় ১৪ বছর পরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের প্রথম সমাবর্তন। আর তাই এ সমাবর্তনকে ঘিরে নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে। সমাবর্তনের জন্য জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে (ধূপখোলায় মাঠ) নির্মাণ করা হচ্ছে বিশালাকৃতির প্যান্ডেল।

যেখানে ১১ জানুয়ারি সমবেত হবেন প্রায় ১৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তন সফল করতে ইতোমধ্যেই নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথম সমাবর্তনকে সামনে রেখে ইতিহাসের সাক্ষী হতে অপেক্ষমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সমাবর্তন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৬ টি বিভাগ ও দুটি ইন্সিটিটিউটের সমাবর্তন প্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদেরকে সমাবর্তন বা কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সনদ প্রদান করে আসছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তন দিতে হবে বলে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জোর আন্দোলনে টনক নড়ে প্রশাসনের। প্রথম সমাবর্তন আয়োজনের জন্য সমাবর্তনের স্থান, সময় ও পরিকল্পনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সুপারিশ করার লক্ষ্যে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমানকে আহবায়ক এবং প্রশাসন ও একাডেমিক এন্ড কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সদস্য-সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তনের আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে ভিসি বরাবর সুপারিশ প্রদানের জন্য কমিটিকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ১ মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি ও সান্ধ্যকালীন ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা যারা অন্তত একটি ডিগ্রি জবি থেকে অর্জন করেছে তারাই অংশগ্রহণ করছে। তবে সমাবর্তনে একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি সনদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জনকারীরা সমাবর্তনের পর ডিগ্রির সনদ তুলতে পারবেন। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া সমাবর্তন গাউন শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হচ্ছে না। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার দপ্তর থেকে পূর্বে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৭,৮, ৯ই জানুয়ারি অফিস চলাকালীন (সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা) সময়ে স্ব-স্ব বিভাগ হতে কস্টিউম, ব্যাগ ও গিফট সহ সমাবর্তনের অন্যান্য উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী গতকাল (৭ তারিখ) সকাল থেকেই উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করতে সাবেকদের সমাগমে মুখরিত হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। দীর্ঘদীন পর সমাবর্তন পেয়ে সাবেক শিক্ষার্থীরাও অনেক উচ্ছ¦সিত। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে তাদের সমাবর্তনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী গাউন, টুপি, টাই, ডায়েরি, ব্যাগ, কলমদানি সহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করছেন।

এছাড়াও গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন (১১ জানুয়ারি) বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত, ১২ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত স্ব-স্ব বিভাগ হতে মূল সনদ গ্রহণ করবেন। উল্লেখিত তারিখের মধ্যে কেউ সনদ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে মূল সনদ গ্রহণ করতে পারবে।

জবির প্রথম সমাবর্তনে বক্তা মনোনীত হয়েছেন এমিরিটাস প্রফেসর ড. অরুণ কুমার বসাক। তিনি বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এমিরিটাস প্রফেসর। ড. অরুণ কুমার বসাক ১৯৭৫ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনইস ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে, সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন রুপে সাজানো হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনের রংয়ের কাজ করা হচ্ছে। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। আর সমাবর্তনের স্থান (ধূপখোলার মাঠ) প্রস্তুত হচ্ছে ইতিহাস গড়ার জন্য। যেখানে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমবেত হবেন ১১ জানুয়ারি। প্রথম সমাবর্তনকে সামনে রেখে আগ্রহের কমতি নেই বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও। তারাও সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের সাথে পরিচয় ও আনন্দ ভাগাভাগি করতে অধীর অপেক্ষায় আছেন।

এ বিষয়ে জবি ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের একটা অধিকার। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় সচেতেন। বিভিন্ন জটিলতার কারণেই এতোদিন সমাবর্তন করা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় একটি সফল ও পরিপূর্ণ সমাবর্তন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।