দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।যে যেখানে পারছে শেয়ার বিক্রি করে পালাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন হরিলুটের বাজার। তাছাড়া সূচক ও শেয়ারের দরপতন আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে, এমন আতঙ্কে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সংকট ও সরকারি নীতিনির্ধারণী কিছু সিদ্ধান্তের প্রভাবে নতুন বছরেও বড় দরপতনে পড়েছে পুঁজিবাজার।

ফলে সোমবারের ন্যায় মঙ্গলবারও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে প্রথম ঘণ্টায় অর্থাৎ সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে যায় ৫৩ পয়েন্ট। পৌনে দুই ঘণ্টা পর অর্থাৎ ১২টা ১৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক ৮৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান নেয় ৪ হাজার ৩৫ পয়েন্টে। আর আড়াই ঘন্টা পর অর্থাৎ ১ ৩৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক ১১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান নেয় ৪ হাজার ২৩ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে পৌনে দুই ঘণ্টায় লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানির মধ্যে ২৯৪টির শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। বেড়েছে ১৯টির ও অপরিবর্তীত রয়েছে ৩৬টির শেয়ার ও ইউনিটের দর। এ পতনের তালিকা থেকে ডিএসইর ব্লু চিপ বা মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোও বাদ যায়নি। আর আড়াই ঘন্টায় লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩০৪টির শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। বেড়েছে ১৩টির ও অপরিবর্তীত রয়েছে ৩৬টির শেয়ার ও ইউনিটের দর।

পৌনে দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার। এ সময়ে কোম্পানিটির ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

এ সময় ৪.৬৭ শতাংশ দর বেড়ে সবার উপরে রয়েছে জুট স্পিনার্স। আর ৯.৯৪ শতাংশ দর কমে সবার তলানিতে নেমেছে এসএস স্টিল। উল্লেখ, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ডিএসইর মূল্যসূচকে বড় ধস হয়। ওইদিন সূচক কমে ৮৯ পয়েন্ট।

গত কয়েকদিনে শেয়ারবাজারের সূচক যেভাবে কমেছে সেটিকে ‘ফ্রি ফল বা লাগামহীন পতন’ বলে অভিহিত করেছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীরা যখন আস্থা হারিয়ে ফেলেন, তখন এ ধরনের পতন ঘটে। লেনদেনের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। তাতে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে অনেক কোম্পানির শেয়ার।

এ সময় পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে ফোন করে শেয়ার কেনার অনুরোধ জানানো হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ অনুরোধে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়। তাতে সূচক কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পতন থামেনি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তো রয়েছেই। এসব কারণেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা ভালো-মন্দ কোনো কোম্পানির শেয়ারই বাদ দিচ্ছেন না।

এ বিষয় জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যখন বড় ধরনের পতন ঘটে, তখন আতঙ্কিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার কার আগে কে বিক্রি করবেন, সেই চেষ্টা করেন। তাই গতকাল লেনদেনের শুরুর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে সূচক ১০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। যদিও পরে সেই পতনের মাত্রা কিছুটা কমানো গেছে।