দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরনো ইমেজ ফিরে পেতে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড বলে পরিচিত সংগঠন ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে ওয়ার্ডভিত্তিক টিম গঠন করছে ক্ষমতাসীনদের ভ্রাতৃপ্রতীম এই সংগঠন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রভিত্তিক মনিটরিং টিমও ঘোষণা করবে ছাত্রলীগ।

ছাত্রনেতাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংগঠনটির পক্ষে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে নির্বাচনের পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে ওরিয়েন্টেশন কোর্সসহ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এখন মনযোগী হবে ছাত্রলীগ।

গত বছর ছাত্রলীগের জন্য ছিল বেশ দুর্নামের বছর। গত বছরই সংগঠনের ইতিহাসে প্রথম ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অপকর্মের দায়ে বহিষ্কার করেন ছাত্রলীগের অভিভাবক, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই বুয়েট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে আবরার হত্যাকাণ্ডে বেশ দুর্নামে পড়ে সংগঠনটি।

তা সাংগঠনিকসহ অন্যান্য কার্যক্রমে একধরনের অন্তরায়ের সৃষ্টি করে। তবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তারা সংগঠনের এই বদনাম ঘোঁচাতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

চলতি মাসে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভারমুক্ত হওয়ার পর তারা কাজের গতি আরও বাড়িয়েছেন বলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর পর ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ফেরাতেই এখন সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের প্রচারণায় সাহয্য করতে সচেষ্ট থাকবে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা প্রচারণায় অংশ নেবেন। তারা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সেক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে ওয়ার্ড পর্যায়ের টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে। এজন্য দুএকদিনের মধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক টিম গঠন করব। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যেক ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন। আমরা ডোর টু ডোর যেতে চাই। আর নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রভিত্তিক মনিটরিং টিম গঠন করব।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে। এজন্য দুএকদিনের মধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক টিম গঠন করব। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যেক ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন। আমরা ডোর টু ডোর যেতে চাই। আর নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রভিত্তিক মনিটরিং টিম গঠন করব।

ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছাত্রলীগের সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। এছাড়া দক্ষিণের নির্বাচনি এলাকায় ছাত্রলীগের নির্বাচনি কার্যক্রম মনিটরিং করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছাত্রলীগের সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এছাড়া নির্বাচনি এলাকায় ছাত্রলীগের নির্বাচনি কার্যক্রম মনিটরিং করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান হৃদয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ বলেন, আমরা এরইমধ্যে কেন্দ্র কমিটির একটি খসড়া সম্পন্ন করেছি। আমার সভাপতির সঙ্গে বসে আজই ওয়ার্ড কমিটি সম্পন্ন করব। কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমাদের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে জয় পেতে সাহায্য করবে সেই অনুযায়ী আমাদের নেতাকর্মীরা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ এবং এর আওতাধীন থানা এবং কলেজের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে ৫৪টি ওয়ার্ডে সমন্বয় কমিটি গঠন করেছি। এর নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক এগুলো মনিটারিং করব।

এই কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ২/৩ দিনের মধ্যে তাদের আওতাধীন এলাকার সেন্টার কমিটি করে আমাদের কাছে জমা দেবে। আমাদের মূল টার্গেট উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তাদেরকে সহযোগিতা করা।

প্রথম দফায় ২শ জনকে বাছাই করা হবে, যারা ক্লাস করবে। এর পর একটি পরীক্ষা হবে। সর্বশেষ একশ জনকে রাখা হবে। এই একশ জনকে প্রত্যেক সপ্তাহে একজন শিক্ষাবিদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা উনারা এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে ওরিয়েন্টেশন কোর্স শুরু করেছে ছাত্রলীগ। যা প্রতি সপ্তাহে চলবে। ওই কোর্সটি ধীরে ধীরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু এবং শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন ওই কোর্সের সমন্বয় করছেন।

ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু বলেন, প্রথম দফায় ২শ জনকে বাছাই করা হবে, যারা ক্লাস করবে। এর পর একটি পরীক্ষা হবে। সর্বশেষ একশ জনকে রাখা হবে। এই একশ জনকে প্রত্যেক সপ্তাহে একজন শিক্ষাবিদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা উনারা এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ ছাড় প্রশ্ন আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন উত্তরপত্র থাকবে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই কোর্সটি যাবে।