দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দাবিতে বিনিয়োগকারীদের মানবন্ধনের পর এবার জাতীয় সংসদে উত্তপ্ত হয়েছে। জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশিদ ও বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ পুঁজিবাজার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুঁজিবাজার ডেড, পুঁজিবাজারকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ জরুরী। কারণ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে।

অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ২০১০ সালের বর্তমান পুঁজিবাজারের করুন দশা। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বিকল্প নেই।  গত বুধবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এই দাবি করেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে করছিলেন।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশ চলে তিন নীতিতে, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং দুর্নীতিতে। শেয়ার মার্কেট মাটিতে শুয়ে গেছে, বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে। অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পুঁজিবাজার কেন এরকম হল। অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত সুদক্ষ।

শেয়ারবাজার নিয়ে চিন্তাও করেন, ওনার একটা গভীর চিন্তাভাবনাও আছে। এই মার্কেটের কোথায় কি হচ্ছে এর সম্মুখ ধারণা ওনার আছে। কারণগুলো আমাদের সবার জানা। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দুর্বল পচা কোম্পানিগুলো লিস্ট করে বাজারে ছেড়ে দেয়। আর বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে পড়ে। আমরা বলেছিলাম দুর্বল কোম্পানিগুলোকে যেন লিস্টং না করে। শেয়ারবাজার ধসের একমাত্র কারণ দুর্বল কোম্পানির শেয়ার বাজারে লিস্টিং দেওয়া।

তিনি বলেন, আমরা লিস্টিং দেই না। দেয় সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আমরা বার বার ফেরত পাঠাই দুর্বল লোক পচা কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসছে, যার ফলে আমাদের বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি করেছিলাম। আজ পর্যন্ত কমিশন করা হয় নাই, একটা লোককেও শাস্তির আওতায় আনা হয় নাই। বাজার থেকে মূলধন ৯৫ হাজার কোটি টাকা নেই।

সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের দিকে অভিযোগ তুলে বলেন, পচা কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে ছেড়ে দেন। পৃথিবীর কোনো দেশে নাই শেয়ার কিনতে বাধ্য করবে, এই টাকায় শেয়ার বিক্রি করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় বসে গেছে। শেয়ার মার্কেটে যারা ৩০ বছর ধরে যেতো তাদের পায়ে জুতা নেই। তারা বলছে আমাদের দেখার কি কেউ নেই।

সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন জগদল পাথরের মতো বসে আছেন। শুধু লিস্টিং দেওয়াই তাদের কাজ, আর কোনো কাজ নেই। পচা কোম্পানি এনে প্রতিদিন নিঃস্ব করে দেওয়া হচ্ছে, কারো বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে শেয়ার মার্কেট ডিমিউচুয়ালাইজেশন হয়ে গেছে। বলা হলো এটা করা হলে আমাদের কাছ থেকে ৭ বছর ট্যাক্স নেওয়া হবে না। দুই বছর পর আমাদের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে।

ফিরোজ রশীদ বলেন, ইস্যু ম্যানেজারকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। প্রশান্ত হালদার নামে একটা লোক সে নন ব্যাংকিং কিছু প্রতিষ্ঠান করে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে  গেছে। ওনি দেশে নাই পালিয়ে গেছে। কার জবাব কে দেবে। এজন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, প্রধানমন্ত্রী যদি হস্তক্ষেপ করেন তাহলে শেয়ার মার্কেট আবার ফিরে আসতে পারে। নইলে এখান থেকে ফিরে আসার কোনো উপায় দেখি না। তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, মন্ত্রীরা প্রশ্নোত্তর দেন দেশে কোনো বিপর্যয় দেখতে পান না, দেশে কোনো সংকট নাই। এ সমস্ত উত্তর যখন আসে হতভম্ব হয়ে যাই, বিস্মিত হয়ে যাই। গত এক সপ্তাহ যাবৎ পুঁজি বাজারের জন্য মানুষ রাস্তায় শুয়ে পড়েছে, তাদের আজ কাম নাই বিপর্যস্ত লাখ লাখ পরিবার সম্পূর্ণরূপে ধুলায় মিশে যাচ্ছে।

এ ব্যাপের সরকারের কোনো পদক্ষেপ বা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নেই, এই বিষয়ে কোন আশ্বস্থ হতে পারছি না। মুজিব বর্ষ উদযাপন করছি এতো প্রবৃদ্ধি এতো উন্নতি আমরা চারদিকে বিশাল বিশাল স্থাপনা বানাচ্ছি। সত্যিকার অর্থে অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের রক্ষার জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন তা একটু জানাবেন। পত্রিকায় খবর এসেছে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চলে যাচ্ছে অথচ আমরা আজ মুজিব বর্ষ পালন করছি, বলছি দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এত উন্নতি, চারদিকে বিশাল বিশাল স্থাপনা বানাচ্ছি। অথচ অর্থনীতির কী বিপর্যয় অবস্থা! বিনিয়োগকারীকে রক্ষার জন্য অর্থমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?’