এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার লক্ষে সরকার নয়া পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে তারল্য সংকট বিরাজ করায় সরকার এ নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে আইসিবিকে নতুন করে ফান্ড দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। তবে এ ফান্ডের আকার কত হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারন বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের উত্তম সময়। দিন দিন নতুন নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও অস্থিতিশীল বাজার থাকায় লেনদেন তেমন একটা বাড়ছে না।

এছাড়া পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রী নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। টানা অস্থিতিশীল বাজার থেকে উত্তরণের পাশাপাশি চলমান তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু নতুন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের বাজার। ফলে সর্বশেষ কার্যদিবস বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুদিন পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। এতে বেড়েছে সূচক ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থা ও তারল্য সংকটে তলানিতে ঠেকেছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজার আরও খারাপ হবে এই শঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীরা নেমে এসেছেন রাস্তায়। এরপর জাতীয় সংসদে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতিতে আলোচনা হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইসিবিকে আরও সক্রিয় করা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে আকৃষ্ট করাসহ ৬টি উদ্যোগ নিয়েছেন।

শেয়ার সংরক্ষণকারী সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, দেশে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। হিসেবে পৌনে ২৬ লাখ বিনিয়োগকারীর এখন প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে পুঁজিবাজারে ঘুরে দাঁড়াবে।
একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া উদ্যোগগুলো হচ্ছে-পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কতিপয় সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা,

আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, বিদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা ও দেশীয় বাজারে আস্থা সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকগুলো নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমডি ও চেয়ারম্যানরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ ফান্ড দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছে। সব মিলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের প্রস্তাবগুলো পুঁজিবাজারের জন্য পজেটিভ। তবে কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সু-দৃষ্টি দিলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবেই। একই কথা বলেন ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। তিনিও বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলে পুঁজিবাজার ভালো হবেই। তবে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য সুশাসন সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে তিনি মনে করেন।