এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ এক বছর পর পুঁজিবাজার নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করছেন ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার ইস্যুতে উদ্যোগ নেয়ার পর দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন চান বিনিয়োগকারীরা। তেমনি একটি স্থিতিশীল বাজারের দাবি জানিয়েছেন তারা। কারন টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়ে গেছেন। সাধারন বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার ইস্যুতে উদ্যোগ নেয়ার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে সাত বছরের মধ্যে মূল্য সূচকের সবচেয়ে বড় উত্থান হয়েছে রোববার। এতে একদিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপর বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের ওপর।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, সরকার পুঁজিবাজার ভালো করতে আন্তরিক। তারই প্রতিফল দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। তাছাড়া বড় ধরনের ধসের কারণে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
তারা বলছেন, এখন যেহেতু শেয়ারবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে

না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা রোববারের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে। বড় অংকের বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সূচকের এ উত্থানে প্রধান ভূমিকা রেখেছে শেয়ারবাজারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া উদ্যোগ।

শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধসের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়।

বিএসইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার আন্তরিক। শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন সরকার ধারাবাহিকভাবে তা করবে। সভায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ অচিরেই কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তার জন্য মতামত দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে: শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পর্যালোচনা, আইসিবি’র বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, বাজারে আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এমন ঘোষণার পর রোববার ছিল শেয়ারবাজারের প্রথম কার্যদিবস। এদিন লেনদেনের শুরুতেই সূচকের বড় ধরনের উত্থান ঘটে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আশা করা যায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ছাড়াও অন্য ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়। সরকার চায় শেয়ারবাজার ভালো হোক, এমন ধারণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফিরে আসবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করবেন। তারই প্রতিফল শেয়ারবাজারে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বড় দরপতনের কারণে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বড় উত্থান হওয়া স্বাভাবিক। আমরা বিশ্বাস করি বাজার সামনে আরও ভালো হবে।

তিনি বলেন, বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে তখন বাজারে গুজব ছড়িয়ে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানোর একটি প্রবণতা থাকে। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্বল কোম্পানি এড়িয়ে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্যানিক সেল দেয়া যাবে না। ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করে ধরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছিলাম। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি এখন বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং বাজার ভালো হবে।