প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পুঁজিবাজারে নতুন চমক
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিপর্যস্ত পুঁজিবাজার টেনে তুলতে বিপর্যস্ত পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে এবার নড়েচড়ে বসছে সরকার সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সরকার যে কোন মুল্যে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখবে এমন প্রত্যাশা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের। কারন এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিয়েছেন। এলক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পাঠানো প্রস্তাব আমলে নেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে সুনির্দিষ্ট ৬টি উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্যোগের পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংক থেকে নতুন করে বিনিয়োগের কথা ঘোষণার পর বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করছে। তেমনি বিনিয়োগ করছে মার্চেন্ট ব্যাংক।
এদিকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর পুঁজিবাজারে চলতি বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বৃহস্পতিবার। সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের ক্রয় প্রবণতা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বাজারের সার্বিক লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা অতিক্রম করার পাশাপাশি সূচকও ৭৩ পয়েন্ট বেড়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণায় এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ১৬ জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত টানা ৩ কার্যদিবস ডিএসই ও সিএসইতে সূচকের বড় উত্থান হয়। বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়ে সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়।
এ বিষয় জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ড. আবু আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ এসব কথা আমরা আগে থেকে বলে আসছিলাম। এখন প্রধানমন্ত্রী বলাতে সেটি নির্দেশনা হিসেবে যাচ্ছে।
এ বিষয় সম্প্রতি ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, টানা দরপতনের কারণে দীর্ঘদিন থেকে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের হতাশা ছিল। কিন্তু আমাদের শেষ ভরসার জায়গা প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে।
ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে ওনার দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করেছি। আর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার মানে হল সরকার শেয়ারবাজারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডিএসইর পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছি।
জানা গেছে, দেশের শেয়ারবাজার গতিশীল করে সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ৬টি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক নীতিনির্ধারণী সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ওই সব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো।
নির্দেশনায় আরও রয়েছে- দেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও দেশীয় বাজারে আস্থা সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়ানোর লক্ষ্যে ৬ বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা চিহ্নিত করে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে বিদ্যমান আইন অনুসারে ব্যাংকগুলো তার রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে কোনো কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ১৫ শতাংশেরও কম। এ অবস্থায় বাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি চার ব্যাংক। এগুলো হল- সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংক।