এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘমেয়াদী ও স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। কিছুদিন যাবৎ পুঁজিবাজার একটু ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। মূলত বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ক্ষুদ্রদেরও আনাগোনা বাড়ছে বাজারে। এটি বাজারের জন্য ভালো দিক। সামনের দিনগুলো এভাবেই বাজার ইতিবাচক ধারায় এগোলে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বিনিয়োগকারীও আসবেন এবং তাদের বিগত দিনের লোকসান ধীরে ধীরে পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আর এ জন্য দরকার দীর্ঘ মেয়াদী একটি স্থিতিশীল বাজার।

এখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সাময়িক পরিকল্পনায় বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। বাজার স্থিতিশীল বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কতটুকু কাজ করবে সেটাই দেখার বিষয়। এখন যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বাজার ভালো করার জন্য কাজ না করে সেক্ষেত্রে আগেরকার মতো পতন অব্যাহত থাকতে পারে। কাজেই প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হবে এবং তারা পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহী হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বের পুঁজিবাজারে যখন বাজারসংক্রান্ত কোনো নিয়মনীতি করা হয়, তার আগে তারা অনেক গবেষণা করেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ছাড়াও বিভিন্ন খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। তারপর সেটি বাস্তবায়ন করা হয়। বাজারে সমস্যা হলে যাতে কেউ এটি নিয়ে কোনো কথা বলতে না পারেন। কিন্তু আমাদের বাজারে তার ভিন্নতা দেখা যায়।

এ পর্যন্ত যতগুলো বাজার সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা এককভাবে। ফলে বাজারে যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এটি নিয়ে সমালোচনা করে। তাই বাজারসংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে সব ধরনের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলে কেউ ছোট হয়ে যাবে না। বরং পুঁজিবাজারের জন্য সেটি ভালো।

আসলে এখানে মানসিকতার একটা বিষয় রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যারা রয়েছে তাদের মধ্যে এ বিষয়টির অভাব রয়েছে। তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন হয়ত দেখা যাবে না।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, প্রকৃত পক্ষে পুঁজিবাজারে ফান্ডের কোনো ‘ক্রাইসিসি নেই’। বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আস্থা পাচ্ছে না। তারা যে দাম দিয়েই শেয়ার কিনছে, তারপরের দিন সেই শেয়ারের দামই কমছে। ফলে আস্থা ফেরাতে যা করণীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার তাই করবে হবে। আস্থা ফিরে এলে বাজার এমনে এমনে ভাল হওয়া যাবে।

বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও মো. রিয়াদ মতিন বলেন, গত কয়েকদিনের বাজার দেখে মনে হচ্ছে স্থিতিশীলতার যাচ্ছে। তবে বাজারের এ অবস্থায় এখন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পোর্টফোলিও খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এখান থেকে না পারছি বেরোতে আবার না পারছি ধরে রাখতে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও সংকটে রয়েছে। আবার পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইসিবি। বাজার যখন খারাপের দিকে যায় তখন একে স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব আইসিবির।

অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আইসিবির বড় একটি ভূমিকা রয়েছে, কারণ আইসিবি একাই ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে। কিন্তু কেন তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। লাখ লাখ মানুষ এ বাজারে বিনিয়োগ করেছেন এবং এর সঙ্গে তাদের পরিবার জড়িত রয়েছে। বাজারের এ সংকটে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করা উচিত।

পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ আহছান উল্লাহ মোহাম্মদ আহছান উল্লাহ বলেন, ধারাবাহিক পতনসহ আরও বিভিন্ন কারণে বাজারের এ বেহাল দশা। পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দূর করার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পলিসি সাপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। যদি এটি দেওয়া হয় কিছুটা আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে হয়। তবে এ সাপোর্ট পেলে বাজার একেবারে ভালো হয়ে যাবে-তা বলছি না।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা ফিরে এসেছে। যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ যদি পুরোপরি বাস্তবায়িত হয় বাজার সামনে আরও চাঙ্গা হবে। বিনিয়োগকারীদের পুরানো ক্ষতো মুছে যাবে। শাকিল রিজভী বলেন, এখন যেহেতু শেয়ারবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। আশা করা যায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। আস্থা বাড়লে বাজারে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন লোভনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বাজার যখন ভালো হয় তখন একটা গ্রুপ এর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। বিনিয়োগকারীদের উচিত এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। তাদের উচিত ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা।