জয়নাল আবেদিন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসএস স্টিলের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে শোর ক্যাপ হোন্ডিংস লিমিটেডের নামে বরাদ্দকৃত প্লেসমেন্ট শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ কাজে এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনকে সহায়তা করছে দ্যা রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস (আরজেএসসি) এবং শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান শোর ক্যাপ হোন্ডিংস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ মাজাহারুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন শোর ক্যাপ হোন্ডিংস লিমিটেডের এইচআর ম্যানেজার মনিরুজ্জামান রাসেল, পারচেজ অফিসার মুনায়েম খান ও অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন।

লিখিত এক বক্তব্যে শোর ক্যাপ হোন্ডিংস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এসএস স্টিল লিমিটেড অভিনব পন্থায় জালিয়াতি করে অন্য কোম্পানির নামে বরাদ্দকৃত শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। প্রায় একই নামে কোম্পানি খুলে প্লেসমেন্ট শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা। এই অবৈধ কাজে সহায়তা করছে আরজেএসসি এবং শেলটেক ব্রোকারেজ। আর এ জালিয়াতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন।’

লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ‘২০১৫ সালের জুন মাসে আমাদের কোম্পানি এসএস স্টিল লিমিটেড থেকে ৯৯ লাখ ৯১ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় করে। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ছয়টি চেকের মাধ্যমে ওই বছরে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে শেয়ারের মূল্য হিসেবে ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর আরজেএসসি’র মাধ্যমে এসএস স্টিলের লিমিটেডের শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৭ সালে এসএস স্টিলের শেয়ার হোল্ডিংয়ের তথ্যে (ফরম-১০এ) আমাদের কোম্পানি শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেডের নামে উল্লেখিত শেয়ার দেখানো হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে আইপিও প্রসপেক্টাসে ঠিকানা ঠিক রেখে ‘শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেড’ এর নাম বদলে ‘শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড’ করা হয়।

শোর ক্যাপ হোন্ডিংসের কোম্পানি সচিব বলেন, ‘২০১৯ সালে জন্ম নেয়া শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেডের নামে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিও অ্যাকাউন্ট খোলে স্বনামধন্য সিকিউরিটিজ হাউজ শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড। এটা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের জন্য খুবই পরিতাপের বিষয় যে শেলটেক ব্রোকারেজও জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন অত্যন্ত চতুর ও ক্ষমতাবান হলেও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তিনি জালিয়াতির কিছু ছাপ রেখে জান। শেলটেক ব্রোকারেজে তিনি ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে জালিয়াতি কোম্পানির নামে বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন। যার নং ১২০২৫৫০০৬৬৯৩০৪২৪। তার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে আরও একাধিক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।’

এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনের জালিয়াতি থেকে আমাদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমরা উচ্চ আদালতে যাই। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শোরক্যাপ হোল্ডিংয়ের নামে থাকা বিও অ্যাকাউন্টে এসএস স্টিলের ৯৯ লাখ ৯১ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আসল মালিকের বদলে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন কোম্পানি গঠন করে প্লেসমেন্ট শেয়ার হস্তান্তর ও আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ছয় মাসের জন্য ওই নিষেধাজ্ঞা দেন। আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই প্লেসমেন্ট শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি না করার কথাও বলা হয়েছে।

মাজাহারুল বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি সোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবীর মাধ্যমে কোম্পানি সচিব ওই রিট আবেদন করেন। আবেদনে এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, কোম্পানি সচিব মোস্তাফিজুর রহমানসহ নামসর্বস্ব কোম্পানির পরিচালক হাসনা অপগ্যানহ্যাপেন, সাদাত রহমান, আরজেএসসি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার হস্তান্তরে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।

২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর লতিফ সিকিউরিটিজের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে শেয়ার হস্তান্তরের জন্য এসএস স্টিলকে চিঠি দেয় শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেড। কিন্তু কোম্পানিটি সেই চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি। যে কারণে এ বিষয়ে বিএসইসি, সিডিবিএল, ডিএসই ও সিএসই’র হস্তক্ষেপ চায় কোম্পানিটি। এরপর এসএস স্টিলের পক্ষ থেকে শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেডের বদলে কাছাকাছি নামের ‘শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড’-এর শেল্টেক ব্রোকারেজে থাকা অন্য বিও অ্যাকাউন্টে ওই শেয়ার হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নজরে আনলে সংস্থাটি আরজেএসসি ও আইপিও প্রসপেক্টাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা আমলে নেয়নি এসএস স্টিল।

তিনি আর বলেন, ‘উচ্চ আদালতের আদেশ ও বিএসইসির হস্তক্ষেপে শেয়ার বিক্রি-হস্তান্তর করতে পারছে না জালিয়াত কোম্পানি শোরক্যাপ হোল্ডিং। এবার উচ্চ আদালতের আদেশের পর শোর ক্যাপ হোল্ডিংসের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সত্য রঞ্জন মন্ডলকে না জানিয়ে গত ২০ জানুয়ারি চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেছে শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড। সত্য রঞ্জন মন্ডলের অনুপস্থিতিতে শুনানি শেষে উচ্চ আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত।

আইন ভেঙ্গে আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্টারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। তবে শোর ক্যাপ হোল্ডিংসের করা এই দাবিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক বলে দাবি করেছে এসএস স্টিল কর্তৃপক্ষ। শোর ক্যাপের এই দাবির পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এসএস স্টিলের সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘টাকা দিয়ে প্লেসমেন্ট শেয়ার না পাওয়ার দাবি মিথ্যা। তারা সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা দাবি করেছে। নিশ্চয় এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে। প্রসপেক্টাসে তাদের দাবিকৃত কোম্পানির নামই নাই। ২০১৭ সাল থেকে অনলাইনে আছে। এতদিন তারা কিছু বলেনি। কিন্তু হঠাৎ অযৌক্তিক দাবি করার কারণ বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরো বলেন, শোর ক্যাপ হোল্ডিংসের মালিকানায় রয়েছে শেয়ারবাজার কারসাজিকর ও জুয়ারি লুৎফর রহমান বাদল। তিনি বিদেশে থেকেও এ ষড়যন্ত্র ত্যাগ করতে পারেননি। তিনি এসএস স্টিলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চাচ্ছে।