দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সতর্কতা অবলম্বন করছেন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে থাকলেও গত ডিসেম্বরে তারা বিভিন্ন কোম্পানিতে কৌশলগত বিনিয়োগ কমেছে। এ সময় তালিকাভুক্ত ১৪১ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমেছে। যদিও আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরে তাদের বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছিল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩১৩ কোম্পানির শেয়ার ধারণের চিত্র পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

অবশ্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ১২৯ কোম্পানিতে স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও কিছুটা বেড়েছে। টাকার অঙ্কে নিট অন্তত ১ কোটির বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৫৯ কোম্পানিতে। বিপরীতে নিট ১ কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে ৮৭ কোম্পানি থেকে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি কমেছে নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স থেকে। গত নভেম্বর শেষে নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ছিল ৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছিল ২২ শতাংশ। কমে যাওয়া এ শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল অন্তত ১১ কোটি টাকা। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমার পরও ডিসেম্বরে এর শেয়ারদর ৭ শতাংশ বেড়ে ২৫ টাকা ছাড়িয়েছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল কাট্টলী টেক্সটাইল।

নভেম্বর শেষে এ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ডিসেম্বর শেষে নেমেছে ১১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার সোয়া ১৯ শতাংশ থেকে কমে পৌনে ১১ শতাংশে নামে। এর বাইরে গত ডিসেম্বরে ৫ শতাংশ থেকে প্রায় ৬ শতাংশ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে সেন্ট্রাল ফার্মা, কনফিডেন্স সিমেন্ট, নিউ লাইন ক্লোদিংস, ফরচুন সুজ এবং ইন্ট্রাকো সিএনজি রিফুয়েলিংয়ের।

এছাড়া কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, আলহাজ টেক্সটাইল, ড্রাগন সোয়েটার, ইসলামিক ফাইন্যান্স, রিংশাইন টেক্সটাইল, মেট্রো স্পিনিং, ফনিক্স ফাইন্যান্স, সিলকো ফার্মা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, জিএসপি ফাইন্যান্স, ভিএফএস থ্রেড, ম্যাকসন্স স্পিনিং, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, সিলভা ফার্মা ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে। এছাড়া ডরিন পাওয়ার, বিডি অটোকার, লাফার্জহোলসিম সিমেন্টসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে।

টাকার অঙ্কে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ প্রত্যাহারে শীর্ষে ছিল কনফিডেন্স সিমেন্ট। ডিসেম্বর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিট বিক্রি করা ৪১ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ারের মূল্য ছিল প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে থাকা লাফার্জহোলসিমের ছিল প্রায় ৪১ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২০ কোটি টাকা করে, ফরচুন সুজে ১৮ কোটি টাকা, ডরিন পাওয়ারে ১৫ কোটি টাকার বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে।

বিপরীতে গত ডিসেম্বরে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ধারণের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আনলিমা ইয়ার্নে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সাড়ে ৯ শতাংশ। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারদরও ৫১ শতাংশ বেড়ে ৪২ টাকায় উঠেছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ২১ দশমিক ৮৪ থেকে বেড়ে ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাহিন স্পিনিংয়ে ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে ৩৫ দশমিক ২৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এছাড়া মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ও জাহিন স্পিনিংয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারণের হার কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এ সময় সমতা লেদার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে মোট শেয়ারের বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেড়েছে। ২ শতাংশের ওপর বেড়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স, আরডি ফুড, বিচ হ্যাচারি, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, সায়হাম কটন, আল-আরাফাহ ব্যাংক ও প্রাইম টেক্সটাইল থেকে।

এর বাইরে ন্যাশনাল টিউবস, সিঙ্গার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। টাকার অঙ্কে নিট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল আল-আরাফাহ ব্যাংক। কোম্পানিটিতে ডিসেম্বরে যে ২ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি শেয়ার বেড়েছে, তার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। এ বিবেচনায় সিঙ্গারে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৮ কোটি টাকার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকে ১৬ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সে ১৩ কোটি টাকা এবং স্কয়ার ফার্মায় প্রায় ১১ কোটি টাকা।