দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: লেনদেন মন্দা পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব আদায় কমছে সরকারের। বাজারের বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হলে ভবিষ্যৎতে সরকারের রাজস্ব আয় আরো কমার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, অব্যাহত বিক্রয় চাপ, বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ সংশোধন করায় প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রয় চাপ কমেছে। ফলে, সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে পুঁজিবাজার থেকে।

তারা বলেন, ঊর্ধ্বমুখী বাজারে বিনিয়োগকারীদের মুনাফার সাথে সরকারের রাজস্বও বাড়ে। কিন্তু বাজারের লেনদেন মন্দা অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীরা “ওয়েট অ্যান্ড সি” পলিসি অনুসরণ করছে। ফলে, মাসের ব্যবধানে সেন্ট্রাল ডিপোজিটারী বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিডিবিএল) বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও সরকারের রাজস্ব বাড়ছে না।

জানা যায়, পুঁজিবাজার থেকে দু’ভাবে রাজস্ব আদায় করে সরকার। এর একটি হচ্ছে- শেয়ার লেনদেনের ওপর উৎসে আয়কর বাবদ রাজস্ব। অন্যটি হলো- পরিচালক, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারধারীদের শেয়ার বিক্রি বাবদ মূলধনী মুনাফা থেকে রাজস্ব আয়।

এর মধ্যে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৩ বিবিবি ধারা অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মাধ্যমে শেয়ার বেচাকেনা থেকে এবং আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৫৩এম ধারা অনুযায়ী উদ্যোক্তা পরিচালকদের ও প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি থেকে রাজস্ব আদায় করে থাকে।

ডিএসই’র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই’১৯-জানুয়ারি’২০২০) পুঁজিবাজার থেকে সরকার ৮৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব বাবদ আদায় করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে ৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৩৯.৩১%।

এদিকে, সদ্য সমাপ্ত মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে সরকার রাজস্ব বাবদ আদায় করেছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তথ্য সূত্র বলছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আদায় করেছিল ৪৪৭ কোটি টাকা। এরপর থেকেই পুঁজিবাজার মন্দার সাথে সরকারের রাজস্ব আদায় কমতে থাকে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২৭২ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ১২৭ কোটি টাকা, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ১৫৪ কোটি টাকা, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১৭৪ কোটি টাকা, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১৫৮ কোটি টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২৪৬ কোটি টাকা, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ২৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ট্রেকহোল্ডারদের কমিশন এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের ও প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫১ কোটি টাকা।