দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জ্বালানি খাতের কোম্পানির পাশাপাশি এবার সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক তিন ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যাংক তিনটি হচ্ছে সোনালী, জনতা ও অগ্রণী। এর বাইরে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের আরও শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোড করা হবে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে আগামী ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত এ চার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠকেই ব্যাংকগুলোর জন্য পুঁজিবাজারে আসার সময়সীমা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি খাতের সরকারি পাঁচ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা কোম্পানিগুলো হচ্ছে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল) ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। এই কোম্পানিগুলো আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদন জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি খাতের কোম্পানির পর এবার সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হলো। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে অর্থমন্ত্রী, চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পাশাপাশি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন।

পুঁজিবাজারে তালিকভুক্তির আবেদনের আগে ব্যাংকগুলোর সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন ছাড়াও পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ সমস্যার কারণে কাক্সিক্ষত মুনাফা হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের পরিচালন মুনাফা থাকলেও খেলাপি ঋণের সঞ্চিতির কারণে নিট মুনাফা অস্বাভাবিক হারে কমছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যাংক। সারা দেশে এ ব্যাংকের রয়েছে ১ হাজার ২২৪টি ব্রাঞ্চ। ২০১৮ সালে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকটির সুদ বাবদ সমন্বিত আয় হয় ৩ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।

বিপরীতে বিভিন্ন ধরনের আমানতের বিপরীতে সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এতে সুদ বাবদ নিট লোকসান হয় ৬২০ কোটি টাকা। তবে এ সময় বিনিয়োগ, কমিশন, এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজসহ অন্যান্য আয় হয় ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। ফলে ২০১৮ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন আয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

২০১৮ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এর ফলে সঞ্চিতি, অবচয় ও করপূর্ববর্তী আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকটিকে খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়েছে। আগের বছর ২০১৭ সালে মোট সঞ্চিতির পরিমাণ ছিল ২৩৮ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর ২০১৮ সালে সোনালী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ২৩২ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৭১৬ কোটি টাকা।

২০১৮ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেডে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। একই সময় ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের মোট ৯১৩টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকটির সুদ বাবদ আয় ছিল ৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।

এ সময় বিভিন্ন ধরনের আমানতের বিপরীতে ব্যাংকটি ২ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা ব্যয় করে। ফলে ২০১৮ সালে নিট সুদ আয় দাঁড়ায় ৭৫৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৪ শতাংশ বেশি। এছাড়া বিনিয়োগ, কমিশন, এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ ও অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। ফলে এ সময় ব্যাংকটির মোট আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম।

২০১৮ সালে জনতা ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় হয় ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। ফলে মোট সঞ্চিতি ও কর পরিশোধের পূর্বে ব্যাংকটির মুনাফা দাঁড়ায় ৯৮১ কোটি টাকা। এ বছর খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন খাতে সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯৩ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর জনতা ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়ায় মাত্র ১৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ২৭৩ কোটি টাকা।

সারা দেশে অগ্রণী ব্যাংকের মোট ব্রাঞ্চ রয়েছে ৯৫৩টি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৬২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ সময় ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। এ সময় অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা।

২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের নিট সুদ আয় হয় ৮৯৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া বিনিয়োগ, কমিশন, এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ ও অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ফলে ২০১৮ সালে পরিচালন আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এ সময় পরিচালন ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। ফলে সঞ্চিতি, অবচয় ও করপূর্ব আয় দাঁড়ায় ৮৪৮ কোটি টাকা। এ সময় খেলাপি ঋণ ও বিভিন্ন খাতে ব্যাংকটিকে ৪৮৪ কোটি টাকা সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়েছে। কর পরিশোধের পর ২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১১০ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬৯৪ কোটি টাকা।