দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সরকারী চার ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন মন্ধা পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হলে বাজারে যেমন তারল্য সংকট বাড়বে, তেমনি বাজার আরো অস্থিতিশীল হবে। কারণ চার ব্যাংকের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংক খেলাপী ঋণের পরিমান বাড়ছে।  একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার এমনিতেই চাহিদা ও যোগানোর সাথে সামঞ্জস্য নেই। তার মধ্যে নতুন করে চার ব্যাংক তালিকাভুক্ত হলে তারল্য সংকট আরো বাড়বে। কারণ সাম্প্রতিক পুঁজিবাজারে গড়ে ৩০০ কোটি বেশি লেনদেন হচ্ছে না। এসব ব্যাংক তালিকাভুক্তি করতে হলে লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার গড়ে হতে হবে।

যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার। আমরা যেকোনো মূল্যে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে চাই। তাই আগামী অক্টোবরের মধ্যে আরও চারটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারে আসছে। এ ছাড়া বাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের আরও শেয়ার ছাড়া হবে। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর বিনিয়োগকারীদের মাঝে নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত যে চার ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, সেগুলো হলো সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড। এর বাইরে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের সরকারি অংশের আরও শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া হবে। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের হাতে।

ব্যাংকগুলোর তালিকাভুক্তির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারি যেসব ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে একটির শেয়ার বাড়ানোসহ পাঁচটি ব্যাংক আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসব। ইতিমধ্যে বাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের মোট ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়া হবে। পাশাপাশি আমরা নতুনভাবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে (বিডিবিএল) পুঁজিবাজারে নিয়ে আসব। এরপর অগ্রণী, জনতা এবং সর্বশেষ আমরা সোনালী ব্যাংককে নিয়ে আসব। আমরা এ বিষয়ে একটি কমিটিও করে দিয়েছি।

কমিটিতে পাঁচটি ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকবেন এবং এটিকে দেখাশোনা করবে আইসিবি।’ কবে নাগাদ এসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে আসবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অক্টোবরের পরে যাব না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই আমরা এগুলো করে ফেলব। এ বছরের মাঝেই আমরা ভালো কাজ যা আছে করে ফেলব।’ তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংককেও আমরা নিয়ে আসব। তবে এটাতে একটু সময় লাগবে। বাকি চারটি আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকাভুক্ত করে ফেলব। এ কাজ হয়তো দুই পর্যায়ে হতে পারে। আমরা সেপ্টেম্বরের মাঝেই কাজগুলো করতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। তারাই সরকারকে টাকা দিচ্ছে। তাই এখন আর রিফাইন্যানন্সিংয়ের দরকার পড়ছে না বলেও জানান তিনি। প্রতিটি ব্যাংকই লাভজনক।’

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, খেলাপি ঋণে জর্জরিত হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া প্রতিটি ব্যাংকই মুনাফায় রয়েছে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের কারণে নিট মুনাফার পরিমাণ কম। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) মোট বিতরণ করা ঋণের ৪৬ শতাংশই খেলাপি। তারপরও ২০১৮ সালে ব্যাংকটির সমন্বিত নিট মুনাফা হয়েছে ৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক। ২০১৮ সালে ব্যাংকটির মোট ঋণের ২৬ শতাংশ খেলাপি। এ সময় খেলাপি ঋণের সঞ্চিতি সংরক্ষণ ও কর পরিশোধের পর সোনালী ব্যাংকের নিট মুনাফা হয় ২৩২ কোটি টাকা।

২০১৮ সালে জনতা ব্যাংকের মোট পরিচালন আয় ছিল ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। সঞ্চিতি ও কর পরিশোধের আগে ব্যাংকটির মুনাফা দাঁড়ায় ৯৮১ কোটি টাকা। এ বছর খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন খাতে সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯৩ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর জনতা ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়ায় মাত্র ১৮ কোটি, যা আগের বছর ছিল ২৭৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালন আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি ও কর পরিশোধের ২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১১০ কোটি, যা আগের বছর ছিল ৬৯৪ কোটি টাকা।