দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিশেষ তহবিলের অর্থ ব্যবহারে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। দুর্বল কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ঝুঁকি রোধে এটি করা হয়েছে। ফলে তালিকাভুক্ত ১৪২টি সিকিউরিটিজে এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

ব্যাংক, ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে পুঁজিবাজারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দিতে বিশেষ তহবিল গঠন করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে। তবে ওই তহবিলের অর্থ কোন ধরনের সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে, সে-সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, যেসব মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বিগত তিন বছর ইউনিটধারীদের ন্যূনতম ৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে, সেসব ফান্ডে বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। বর্তমানে ডিএসইতে ৩৭টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, যার মধ্যে ১৭টি মিউচুয়াল ফান্ডে বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। শর্তের কারণে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে ৪৬ শতাংশে বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। যদিও মোট তহবিলের ন্যূনতম ১০ শতাংশ অর্থ মেয়াদি ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারণ এসব মিউচুয়াল ফান্ড বিগত তিন বছরে ইউনিটধারীদের নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট দিয়েছে।

অবশ্য মেয়াদি ২০টি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, যেগুলো থেকে ইউনিটধারীরা ৫ শতাংশ কিংবা তার বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন, সেসব ফান্ডে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। এ শর্তে বেশিরভাগ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বর্তমানে লোকসানে থাকলেও গতকাল উল্লেখযোগ্য হারে দর বেড়েছে। আর যেসব বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের নিট সম্পদ মূল্য অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি এবং বিগত তিন বছর ন্যূনতম ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে, সেসব ফান্ডে ওই বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে।

ইকুয়িটি শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি বিগত তিন বছর টানা ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে এবং যেসব কোম্পানির অনূর্ধ্ব ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি-ফ্লোট (লেনদেনযোগ্য) শেয়ার রয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারে বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। এক্ষেত্রে জেড ক্যাটাগরিতে ৫০টি কোম্পানি রয়েছে, যারা বিনিয়োগকারীদের সর্বশেষ হিসাব বছরে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি, সেসব কোম্পানিতেও বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। এছাড়া লভ্যাংশ দিলেও তা ১০ শতাংশের কম হওয়ায় ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন ৪৮টি কোম্পানির শেয়ারেও বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না।

এছাড়া ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে কিন্তু টানা তিন বছর ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার ধারাবাহিকতা নেই, এমন ২৩টি কোম্পানিতেও ওই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া লভ্যাংশের ইতিহাস না থাকা সদ্য তালিকাভুক্ত ‘এন’ ক্যাটাগরির তিন কোম্পানিতেও বিশেষ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। এর বাইরে আরও কিছু কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোর ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের সংখ্যা ৭০ শতাংশের বেশি, এমন কিছু কোম্পানির শেয়ারেও তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ না করার শর্ত রয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে চলা দরপতনে পুঁজিবাজারে সৃষ্ট তারল্য-সংকট কাটাতে সরকারের কাছে ২৫টি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানায়। গত বছরের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বৈঠকের পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়ার পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল গঠনে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠন করা এই তহবিল থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে। এই তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে। এক্ষেত্রে রেপোর সুদহার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশেষ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ তফসিলি ব্যাংক নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে পারবে। ওই তহবিলের ২০ শতাংশ ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, অন্য ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউস ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ।