দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মৃত্যু ও পদত্যাগ জনিত কারণে জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া পাঁচ আসনের প্রার্থী চূড়ান্তে আজ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডাকা হয়েছে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে গণভবনে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন যৌথসভার সভাপতিত্ব করবেন। সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সূত্র জানায়, যৌথসভায় জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসনের উপনির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হতে পারে। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসন হলো- গাইবান্ধা-৩, ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪, বগুড়া-১ ও যশোর-৬। ইতোমধ্যেই গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম চলবে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা-১০ আসনের এমপি পদ ছাড়েন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ফলে ওই সংসদীয় আসনটি শূন্য হয়ে যায়। এই আসনে উপ-নির্বাচনে যে ক’জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন, তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

শোনা যাচ্ছে একাদশ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, তাপসের বড় ভাই ও যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, তাপসের সহধর্মিণী আফরিন তাপস, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের নামও।

২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন গাইবান্ধা-৩ আসনের এমপি ডা. ইউনুস আলী সরকার। শূন্য হয়ে পড়া এই আসনে উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

তিনি বলেন, আমার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবার। গাইবান্ধার মেয়ে হিসেবে অবশ্যই আমি মনোনয়ন চাইব। তবে প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন, আমি তার পক্ষেই কাজ করব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও সংগঠিত করতে।

এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক, ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য তোফাজ্জল হোসেন সরকারও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সারিতে।

এদের মধ্যে মাহমুদুল হক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগ এ আসন মহাজোটকে ছেড়ে দিতে রাজি হলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন মাহমুদুল। তাছাড়া ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস রাজনীতিতে না থাকলেও বাবার আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করতে বিভিন্ন সময় আগ্রহ দেখিয়েছেন।

গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তার মৃত্যুতে শূন্য হয়ে পড়া আসনটির উপ-নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি অধ্যাপক আব্দুর রহিম খান ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।

মনোনয়নপ্রত্যাশী বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, আমার জন্মস্থান বাগেরহাটে। আমি দীর্ঘদিন এলাকায় কাজ করেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি ওই আসনে প্রার্থী হতে চাই। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জানুয়ারি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বগুড়া-১ আসনের এমপি আব্দুল মান্নান। তার মৃত্যুতে ওই আসনটিও শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে উপ-নির্বাচন হবে এই আসনেও।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব, সারিয়াকান্দি পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মুঞ্জিল আলী সরকার ও ডা. মকবুলার রহমান এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশায় তাকিয়ে আছেন হাইকমান্ডের দিকে।

সবশেষ গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৬ আসনের এমপি ইসমাত আরা সাদেক। শূন্য হয়ে পড়া এ আসনে উপ-নির্বাচনেও দাঁড়াতে চান আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।