দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলতি প্রান্তিকে বাধাগ্রস্ত হবে বিপর্যস্ত চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। তবে এ প্রান্তিকে অর্থনীতিটির প্রবৃদ্ধির হার ইতিহাসের সর্বনিম্ন হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। রয়টার্সের আয়োজনে অর্থনীতিবিদদের এক মতামত জরিপ বলছে, ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ রুখে দেয়া গেলে শিগগিরই পুনরুজ্জীবিত হবে দেশটির অর্থনীতি।

৭-১৩ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত ওই জরিপে অংশ নেন চীনের মূল ভূখণ্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ জন অর্থনীতিবিদ। তারা জানান, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি গত প্রান্তিকের ৬ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের প্রবৃদ্ধিতে এ ধস প্রত্যাশিতই ছিল। ফলে চলতি বছর দেশটির মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে আগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, যা ১৯৯০ সালের পর প্রবৃদ্ধির সর্বনিম্ন হার। গত বছর চীনের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

তবে জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্থনীতিবিদরা এর মধ্যেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, প্রথম প্রান্তিক বাজেভাবে কাটলেও দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে চীনের প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। মূলত চীনের মূল ভূখণ্ডের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদের আশাবাদী পূর্বাভাসের কারণে প্রবৃদ্ধির এ সম্ভাব্য হার বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের এ পূর্বাভাস ছিল ২ দশমিক ৯ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে। উল্লেখ্য, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম চিহ্নিত হয় চীনের উহান শহরে। শহরটি বৈশ্বিক বিভিন্ন পণ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র।

প্যানথিয়ন ইন লন্ডনের এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রেয়া বেয়ামিশ বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ ও সংবরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চীনের যে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে, সে বিষয়ে কেউই কিছু স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। পরিসংখ্যানের অস্পষ্টতার কারণে আমরা সম্ভবত এ বিষয়ে নিশ্চিতও হতে পারব না। তবে আমরা ধারণা করছি, প্রথম প্রান্তিকে দেশটির প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশেরও নিচে নেমে আসবে। তাছাড়া চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ, সরকারিভাবে পূর্বাভাসকৃত ৬ শতাংশের অনেক কম।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত উৎপাদন খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো বছরের অবশিষ্ট সময়ে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু সেবা খাতে যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। কারণ ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ভোক্তারা যেসব সেবা গ্রহণ করেননি বা করতে পারেননি, তা তারা আগামীতে বাড়িয়ে গ্রহণ করবেন না।

মূলত চান্দ্র নববর্ষের সময় থেকেই চীনের হুবেই প্রদেশের উহানসহ কয়েক ডজন শহর ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় যোগাযোগ। এর পর থেকেই এসব শহরের বাসিন্দারা জনসমাগম এড়িয়ে চলছে। এমনকি তারা ঘর থেকেও বের হতে পারছে না। কিন্তু তার পরও চীনা সরকার নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে দেশটির সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে। ব্যাপক মন্দার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে নববর্ষের পুরো ছুটির মৌসুম।

এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্যর্থ হলে চীনের অর্থনৈতিক পরিণতি কী হবে জানতে চাইলে রয়টার্সের জরিপে অংশ নেয়া চীনা অর্থনীতিবিদরা উত্তর দিতে রাজি হননি। তবে বেইজিংয়ের ব্যাংক অব চায়না ইন্টারন্যাশনালের সামষ্টিক অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক বিংনান ইয়ে বলেন, আমার মনে হয় আগামী এপ্রিল নাগাদ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। যদিও প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশে নেমে আসবে, পুরো বছরে যা গিয়ে দাঁড়াবে ৫ শতাংশে।

হংকংয়ের আইএনজির বৃহত্তর চায়নাবিষয়ক অর্থনীতিবিদ আরিস প্যাং বলেন, আমরা দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন আশা করছি না। ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানো রোধের পরও চীনা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াতে অন্তত চারটি প্রান্তিক লাগবে।