দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বকেয়া নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব এবং সিম সংকট সমাধানে গ্রামীণফোনের কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান। আজ রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসির আজমান বলেন, আমাদের হাতে কোনো সিম নেই।

খুচরা বিক্রেতাদের হাতে কিছু সিম রয়েছে। সেগুলো শেষ হলে আর সিম পাওয়া যাবে না। সিম রিসাইকেল করার জন্য বিটিআরসির অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া সিম নষ্ট হলে রিপ্লেসমেন্টের জন্যও সিম পাওয়া যাবে না। রিসাইকেলের জন্য এরই মধ্যে ৩০ লাখ সিম জমা আছে।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, এ সমস্যা সমাধানে কোনো অগ্রগতি হয়নি। নতুন গ্রাহকদের কাছে সিম বিক্রির ক্ষেত্রে আমরা সমস্যার মুখোমুখি হবো। সুতরাং সামনে আমাদের সমস্যা হবে; যদি আমরা এটির সমাধান করতে না পারি। নতুন গ্রাহক পাওয়া যাবে না। কারণ সিম থাকবে না। “তবে বর্তমান গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। তাদের সিম রিপ্লেসমেন্টেও কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু প্রায় ৫০ হাজার কাস্টমার (গ্রাহক) প্রতিদিন আসে। এই গ্রাহকদের জন্য সমস্যা হবে। তবে আমরা আশা করছি এ সমস্যার সমাধান হবে।”

এদিকে গত ২ এপ্রিল টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) থেকে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে চিঠি দেয়। এরপর থেকেই সরকারের সঙ্গে এক ধরনের দ্বন্দ্বে জড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরসি যে বকেয়া পাওনা দাবি করে তার মধ্যে রয়েছে- বিটিআরসির পাওনা আট হাজার ৪৯৪ কোটি এক লাখ টাকা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা চার হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বিটিআরসির পাওনার মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদের পরিমাণ ছয় হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ বকেয়া নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গত ২৭ জানুয়ারি গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য ৪০ শতাংশ নগদ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর আগে অন্তর্র্বতীকালীন ৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে বছরটিতে ১৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঘোষণা করা লভ্যাংশের পরিমাণ আগের বছরের (২০১৮ সাল) তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ২৮০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

লভ্যাংশের পরিমাণ কমে গেলেও ২০১৯ সালে গ্রামীণফোন মোটা অঙ্কের মুনাফা করে। বছরটিতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় ২৫ টাকা ৫৬ পয়সা। এতে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সরকারের বকেয়া পরিশোধের কারণ গ্রামীণফোন লভ্যাংশের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, বিটিআরসির দাবি করা পাওনা টাকা পরিশোধের সঙ্গে লভ্যাংশের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি এটার (বিটিআরসির দাবি করা বকেয়া টাকার সমস্যা) আমরা দ্রুত সমাধান করতে পারি তাহলে এ ধরনের কোনো প্রশ্ন আসবে না। লভ্যাংশ সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়। একটি পলিসি ফলো করে এটি করা হয়।
করোনাভাইরাস মোবাইল সেবার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নে ইয়াসির আজমাল বলেন, সমস্যা একটা হবে এটা সত্য। তবে সময়টা বলা যাচ্ছে না। চীন থেকে সব ধরনের পণ্য আসে। এটা শুধু নেটওয়ার্ক না, যে কোনো ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য এটি একটি সমস্যা। সামনে এটা কতোটুকু সমস্যায় ফেলবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।