এম এ খালেক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজার উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরানো ও ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ৬টি নির্দেশনা দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ৯ ফেব্রুয়ারী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৪টি ব্যাংককে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড এবং অগ্রণী ব্যাংকের ২৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে।

আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এসব ব্যাংকের শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা হবে। তবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার বাজারে নিয়ে আসতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া শেয়ারবাজারে আগে থেকেই ব্যবসারত রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের আরও ১৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে।

বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে রয়েছে। ইতিপূর্বে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের লাভজনক ৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও বাজারে ছাড়া হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার আগামীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার ব্যাপারে এবার সত্যি সত্যি আন্তরিকতার পরিচয় দিতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দায়িত্ব পালনকালে ২৬টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা যায়নি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা কার্যকর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার সম্পর্কে বলেছেন, অর্থনীতির যে ফান্ডামেন্টাল সেই ফান্ডামেন্টালের ওপর সব সময় অবস্থান করে শেয়ারবাজার। কিন্তু আমাদের দেশের শেয়ারবাজার কেন যেন অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

অর্থনীতি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, শেয়ারবাজার তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছে না। আমরা এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, বাজারে কিছুটা মিসম্যাচ রয়েছে। বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ কম। আমাদের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আর সে কারণেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা হলে বাজারে ভালো শেয়ারের জোগান বৃদ্ধি পাবে। এতে বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি হবে। কাজেই এ উদ্যোগটি অত্যন্ত কার্যকর এবং সময়োপযোগী, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই ভালোভাবে চলছে না। বিশেষ করে এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চলছে না।

বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও সেই সম্ভাবনা তারা কাজে লাগাতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস লোকসান দিলেও ব্যক্তি খাতের একই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনা করেন, তারা প্রতিষ্ঠানের মালিক নন। প্রতিষ্ঠানের মালিক হচ্ছে রাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে মাত্র। সরকার তার প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। যারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই এ দায়িত্ব পালন করেন।

ফলে তারা কখনই প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের মনে করেন না। তাদের অধিকাংশেরই লক্ষ্য থাকে কীভাবে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়া যায়। অন্যদিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সরাসরি মালিকের অধীনে বা তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হয়। ফলে সেখানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা থাকে সর্বোচ্চ মাত্রায়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চার শ্রেণির কর্মকর্তা লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে এক শ্রেণির কর্মকর্তা আছেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে খুবই ট্যালেন্ট এবং দক্ষ।

কিন্তু তারা অবৈধ অর্থ ছাড়া কিছুই বুঝেন না। তারা মনে করেন, ‘চাকরি করি বেতন পাই, কাজ করি ঘুষ খাই।’ আর এক শ্রেণির কর্মকর্তা আছেন যারা ঘুষ খান না, কাজও করেন না। অন্য এক শ্রেণির কর্মকর্তা আছেন যারা নিজেরা ঘুষ খান না; কিন্তু অন্যরা ঘুষ গ্রহণ করলে বাধা দেন না বরং পারলে সহযোগিতা করেন। সর্বশেষ এক শ্রেণির কর্মকর্তা আছেন যারা নিজেরা ঘুষ খান না, অন্যকেও ঘুষ খেতে দেন না। এরাই সবচেয়ে বিপদের মধ্যে থাকেন। প্রতিটি সরকার আমলেই এক শ্রেণির অতি উৎসাহী দলবাজ কর্মকর্তা এদের সরকারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে কোণঠাসা করে রাখে।

কিছু কিছু কর্মকর্তাকে দেখা যায়, নিজের কাজ বাদ দিয়ে দলীয় রাজনীতি চর্চায় নিয়োজিত থাকেন। অথবা ব্যক্তিস্বার্থে দলীয় রাজনীতিকে ব্যবহার করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংর্কীর্ণ দলীয় রাজনীতি চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কারণ এতে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কর্ম-পরিবেশ বিনষ্ট হয়। একান্ত আবশ্যক না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রাখা উচিত নয়।

কারণ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসৃত হচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল কথাই হচ্ছে বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দিয়ে অথবা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ সরবরাহ করে টিকিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে একটি পণ্যের মূল্য নিরূপিত হয় চাহিদা ও জোগানের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। ঠিক তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারে টিকে থাকবে কী থাকবে না তা নির্ভর করে বাজারে প্রতিযোগিতার সামর্থ্যরে ওপর। রাষ্ট্রীয় আনুক‚ল্য দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা সরকারের দায়িত্ব নয়। একান্ত আবশ্যক না হলে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা প্রয়োজন।

অথবা ব্যক্তি খাতে একই জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ব্যাপকভিত্তিক অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। কোনো কারণে কাউকে মনোপলি ব্যবসা করতে দেয়া ঠিক নয়। এতে শুধু দুর্নীতিই বাড়ে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়। স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া যত কঠিন, তার চেয়ে বেশি কঠিন হচ্ছে কারও চাকরি চলে যাওয়া।

যেহেতু বড় ধরনের কোনো অন্যায় না করলে কারও চাকরি হারানোর ভয় থাকে না, তাই তারা কাউকে তোয়াক্কা করেন না। এ নিয়ম পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগের বিধান জারি করা যেতে পারে। একজন কর্মকর্তাকে এক বছর বা দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। যারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সর্বোচ্চ সততা, দক্ষতা এবং আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে পারবেন, পরবর্তীতে শুধু তাদের চাকরিই দীর্ঘায়িত হবে।

বিশেষ করে যারা চাকরিরত অবস্থায় কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িত হবেন, তাদের চাকরি পরবর্তীতে আর দীর্ঘায়িত করা যাবে না। সরকার বর্তমানে দুর্নীতিবিরোধী যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে, তার সফলতার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে, এটা অত্যন্ত ভালো একটি পদক্ষেপ। তবে ২৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে না ছেড়ে বরং ৪৯ শতাংশ শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা যেতে পারে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করার সময় ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজেই চাইলেই সরকার অবশিষ্ট ৪৯ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছেড়ে দিতে পারে।

তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার বাজারে ছাড়ার আগে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, তা হল- শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী যাতে ব্যাংকের মালিকানা স্বত্ব লাভ করতে না পারে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যদি বাজারে নিয়ে আসা যায় তাহলে বাজারে ভালো মানের শেয়ারের অভাব অনেকটাই দূর হতে পারে। একইসঙ্গে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শেয়ারবাজারে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এমনকি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়ার সময় কত শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে, সে বিষয়ে শর্তারোপ করা যেতে পারে।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বিনিয়োগকারীদেরও সচেতন হতে হবে। বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিনিয়োগের কলাকৌশল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে হবে। কোনো ক্রমেই হুজুগে বিনিয়োগ করা যাবে না। কারণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে যেমন প্রচুর মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা আছে। আবার ভুল সিদ্ধান্ত নিলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কাও কম নয়।

শেয়ারবাজার কোনো জুয়ার আসর নয়, এটা হচ্ছে বুদ্ধির খেলা। শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলাপ হয় সর্বশেষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে যে সমস্যা বিরাজ করছে, তা দূরীকরণ করা না গেলে শেয়ারবাজারের অবস্থা টেকসই করা মুশকিল হবে। ব্যাংকিং খাত স্টক মার্কেটকে দু’ভাবে প্রভাবিত করে।

প্রথমত, ব্যাংকিং খাত আমাদের মূলধনী বাজারের একটি বড় অংশ ধারণ করে আছে। কাজেই ব্যাংকিং সেক্টরের শেয়ারের দাম কমে গেলে তার প্রভাব অন্য খাতের শেয়ারের ওপরও পড়ে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগকারীদের অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে থাকে। এ অবস্থায় ব্যক্তিখাতে ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি যদি কমে যায়, তাহলে তার প্রভাব স্টক মার্কেটেও পড়বে।

নতুন এবং ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার খুব একটা বাজারে আসছে না। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য বিনিয়োগকারীদেরও কিছুটা দায় রয়েছে। তারা অকারণে আশঙ্কায় ভোগেন। আমাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের হুজগে মেতে ওঠার প্রবণতা খুব বেশি। অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার আছে। বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। শেয়ারমার্কেটে সব সময়ই এক ধরনের অনিশ্চয়তা থাকে।

সেটা মেনে নিয়েই আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আচরণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের আচরণেও কিছু সমস্যা রয়েছে। তাদের বিনিয়োগ কৌশলেই ভুল রয়েছে। সঞ্চয় বা বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের পুরোটাই যে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হয় না, এটা অনেকেই জানেন না।

বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া অনেকেই আছেন যারা আজ শেয়ার কিনে কালই তা বিক্রি করে দিতে চান। শেয়ার কেনার পর তা ধরে রাখতে হবে। শেয়ার ধরে রাখলে এক সময় ক্যাপিটাল গেইন হবে অথবা ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে। আমার একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, লম্বা সময় ধরে রাখলে যে কোনো বিনিয়োগের চেয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগই বেশি মুনাফা দেয়।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আমাদের পুঁজিবাজারনির্ভর হতেই হবে। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকেই বেছে নেবেন। বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে আগামীতে এ সেক্টর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কতটা অবদান রাখতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সেই অবস্থায় শেয়ারবাজারই হতে পারে শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ আহরণের শ্রেষ্ঠ স্থান। উন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য মূলত শেয়ারবাজারের উপরই নির্ভর করা হয়। আমাদের দেশেও হয়তো সেই অবস্থা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। কাজেই এখন থেকেই শেয়ারবাজার শক্তিশালী করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

এম এ খালেক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিষয়ক কলাম লেখক