দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি প্রাইম ইন্স্যুরেন্স বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করেছে। বিনিয়োগকারীদের টাকায় ব্যবসা করলেও সমাপ্ত অর্থবছর শেষে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দিচ্ছে না। অথচ কোম্পানিটি ঠিকই ব্যবসা করেছে। কোম্পানির এমন আচরন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ইপিএস হয়েছে ০.৪৩ পয়সা।

গত বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.১২টাকা। কোম্পানিটি মুনাফা থাকা স্বত্বেও নো ডিভডেন্ড ঘোষণা করায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নো ডিভিডেন্ড ঘোষনা একদিনে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, অথাৎ শেয়ারটির কমেছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে একাধিক বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানি হওয়া স্বত্বেও নো ডিভিডেন্ড ঘোঘণা করায় সবার মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন সরকারসহ নীতি নির্ধারকীমহল যেখানে পুঁজিবাজার ভাল করার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে, সেখানে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মুনাফা থাকা স্বত্বেও কিভাবে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। এ কোম্পানির বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষ কমিটি গঠনের মাঝে তদন্ত করা দরকার।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করেছে। আর যদি প্রতারনা না করে তা হলে নো ডিভিডেন্ডের কারন কি? যেখানে কোম্পানি লাভে রয়েছে সেখানে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার কোন কারন দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্রা লাভ করে ও কোম্পানিগুলো বছরে ডিভিডেন্ড দেয়। এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা ।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৪৩ টাকা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৩১ টাকায়। ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। আর লভ্যাংশ বিতরণে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনে কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ মার্চ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, পুঁজিবাজারের এ দু:সময়ে প্রাইম ইন্সুরেন্সের মতো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে। বিনিয়োগকারীরা স্মরনকালের ধ্বস কাটিয়ে উঠতে না উঠতে নো ডিভিডেন্ড ঘোষনায় মেতে উঠছে। যেখানে সরকার পুঁজিবাজারের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে সেখানে প্রাইম ইন্সুরেন্স নো ডিভিডেন্ড দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। এটা বাজারের জন্য খারাপ দিক। বিনিয়োগকারীরা অনেক আশা নিয়ে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। নো ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সে আশা নিরাশ হয়ে যায়। ভবিষ্যতে কোম্পানিটি কেমন করবে সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।  বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে আমি তাদের যথাযথ শাস্তি দাবি করছি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ০.৪৩ পয়সা ইপিএস শর্তেও নো ডিভিডেন্ড পরিচালকদের জঘন্যতম কারসাজি ছাড়া আর কিছু না। এমন হীন মানষিকতা এবং হীন কর্মকাণ্ডের জন্য ডিসেম্বর ক্লোজিং সকল শেয়ারই কমবেশী আক্রান্ত হবে। ডিভিডেন্ড প্রদানে সঠিক কোন নিয়মনীতি না থাকায় পরিচালকরা নিজেদের হীন স্বার্থে ইচ্ছামত ন্যুনতম ডিভিডেন্ড বা নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এসব অনিয়ম দেখেও বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্স নো ডিভিডেন্ড দিয়ে শেয়ারটাকে জেডে স্থানান্তর পরিকল্পিত, উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করে মালিকদের কুট কৌশলে লাভবান হওয়ার নোংরা প্রচেস্টারই অংশ মাত্র। তাই এইসময়ে ডিসেম্বর ক্লোজিং শেয়ার বাই কারাটাও খুব বেশী রিস্কি হতে পারে। আশা করি সবাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, খুব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিবেন।

এ বিষয় প্রাইম ইন্সুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মনিরুল হককে জিঙ্গাসা করা হলে তিনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, ফোনে কথা বলা যাবে না। সামনা সামনি আসুন তার পর কথা বলবে।  এ বিষয় কোম্পানির সচিব এনামুল হক জানান, প্রাইম ইন্সুরেন্স সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে মাত্র ৫৫ লাখ টাকা। এত কম টাকা দিয়ে কিভাবে আমরা ডিভিডেন্ড দিব। কোম্পানির স্বার্থে আমরা নো ডিভিডেন্ড দিয়েছি।