দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পিপলস লিজিং অবসায়নের নেতিবাচক প্রভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণের কমছে না, বরং বাড়ছে। এর সঙ্গে কমে গেছে ঋণ আদায়ের পরিমাণও। অপরদিকে আমানত সংগ্রহেও তেমন সুবিধা করতে পারছে না। উল্টো আমানত ফেরত পেতে চাপ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা সরকারের কাছে বিশেষ সুবিধা চাইবেন। এরই অংশ হিসেবে শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ওই বৈঠকে পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এজন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে সময়ও চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত দেনদরবার করতে এনবিএফআই সংগঠনের পরিসরও বাড়ানো হয়েছে। আগের চেয়ে নতুন কমিটিতে একজনের পরিবর্তে দুজন ভাইস চেয়্যারম্যান এবং একজন কোষাধ্যক্ষ নির্ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বহুমুখী সংকটে পড়ে গেছে। প্রথমত, কিছু প্রতিষ্ঠান আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করেছে। আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি করেছে। এসব ঋণের একটি অংশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের প্রভাবাধীন কোম্পানিতে চলে গেছে। এখন এসব ঋণ আদায় হচ্ছে না। এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল উচ্চ সুদের আমানত এনে। এখন ঋণের অর্থ না এলেও আমানতের সুদ দিতে হচ্ছে বেশি।

এছাড়া বে লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকই আমানত ফেরত নিতে চাচ্ছে। এত আমানত একসঙ্গে চলে গেলে এনবিএফআই’র সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, আমানতের পুরোটাই যেন একসঙ্গে না ওঠানো হয়। আমরা খুব দ্রুত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করব, যাতে সরকার আমানতের নীতি সহায়তা দেয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র জানিয়েছে, নতুন সংগঠনের কাছ থেকে সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে, দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করা। সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো খাতের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা দেওয়া।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন আর ব্যাংকের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না। এতে নতুন করে কোনো ব্যাংক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমানত দিচ্ছে না। এভাবেই নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়, তহবিলের অর্ধেক সরকারি ব্যাংকে এবং বাকি অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখা যাবে।

কিন্তু এ অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তহবিল সংকটের কারণে বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণকার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দার কারণে পুজিবাজার থেকে মুনাফানির্ভর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বেকায়দায় পড়ে গেছে। এর বাইরে সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্তকুমার হালদারের ঋণকেলেঙ্কারির ঘটনায় লিজিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভরসার বিষয়টি আরও প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে।