দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের সময় শেয়ার বিক্রির চাপ আসে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে। চলতি সপ্তাহে প্রথম তিনদিন শীর্ষস্থানীয় কোন কোন ব্রোকারেজ হাউসের মোট লেনদেনের সিংহ ভাগ আসে শেয়ার বিক্রি থেকে। ফলে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ হাউজগুলোর শেয়ার বিক্রির চাপে পুঁজিবাজার কোন ভাল সংবাদে ঘুরে দাঁড়াতো পারছে না। ফলে বর্তমান পুঁজিবাজার নিয়ে ফের অজানা আতঙ্কে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ আসে পুঁজিবাজারের শীর্ষ ১০ ব্রোকারেজ হাউস থেকে। তাই এসব হাউস থেকে বিক্রিচাপ আসলে তা সামাল দেয়ার সক্ষমতা অবশিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের নেই। গত কয়েক সপ্তাহে ধরে দরপতন চলাকালীন সময়ে রাষ্ট্রীয় একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার বিক্রির ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ের চাপে ছিল। তবে চাহিদার তুলনায় আইসিবির সামর্থ্য কম থাকায় পতন রোধ সম্ভব হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের (ডিলার ও গ্রাহক হিসাব) বিক্রির চাপে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে। এদিন সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে ব্র্যাক ইপিএল থেকে। একইসঙ্গে ক্রয়ের থেকে বিক্রির পরিমাণ বেশিতেও বা নীট বিক্রিতেও শীর্ষে রয়েছে হাউজটি। এদিন ব্র্যাক ইপিএল থেকে ৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে কেনা হয়েছে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। অর্থাৎ কেনার চেয়ে ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বা ১৮৫ শতাংশ বেশি বিক্রি করা হয়েছে। যা আজকে যেকোন হাউজের মধ্যে বেশি। আর এই বিক্রয় চাপই নিতে পারেনি শেয়ারবাজার। যাতে মূল্যসূচকে পতন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬৯ পয়েন্ট।

আগেরদিনও (২৬ ফেব্রুয়ারি) ব্র্যাক ইপিএল থেকে বিক্রির চাপ ছিল। ওইদিন হাউজটি থেকে ৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছিল। আর কেনা হয়েছিল ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ বেশি ছিল ১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আজ শেয়ার বিক্রিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এমটিবি সিকিউরিটিজ। এ হাউজটি থেকে ৪২ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে কেনা হয়েছে ২০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইউসিবি ক্যাপিটাল থেকে ২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার বিক্রির বিপরীতে কেনা হয়েছে ২২ কোটি ৭২ লাখ টাকার।

এ বিষয় শীর্ষ এক সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বলেন, কাস্টমার (গ্রাহক) বিক্রি করলে আমি তো না করতে পারব না। আমার ডিলার হিসাব থেকে বিক্রি হয়েছে কিনা এটা দেখেন। শেয়ারবাজারে দরপতনের আমি দৃশ্যমান কোনো কারণ দেখি না। কারণ সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নে আন্তরিক। বাজারে বিক্রির চাপ ছিল বলেও আমি মনে করি না। লেনদেন হয়েছে প্রায় ছয় শত কোটি টাকা।

একটি সূত্র জানায়, বিশেষ একটি গোষ্ঠী বিশেষ উদ্দেশ্যে শেয়ারবাজারের দরপতনকে উস্কে দিচ্ছে। ওই গোষ্ঠীটি বড় বড় ব্রোকারেজ হাউজে গিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সামনে আরও বড় পতন হবে বলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছেড়ে দিতে প্রলুব্দ করছেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। সূত্রটি জানায়, এ গুজুবের সাথে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহীরাও জড়িত। এছাড়া সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখনই তদন্ত করা উচিত।