দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে গত সাত কার্যদিবস নতুন করে দরপতনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। সবার প্রশ্ন নতুন করে কারা বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। পুঁজিবাজার হঠাৎ আচরন রহস্যজনক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তেমনি কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে পতন ঘটাচ্ছে কারা এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের সংবাদে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বরং আবারও টানা পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে সাত কার্যদিবসে টানা দরপতন ঘটল। শেয়ারবাজারে টানা পতন দেখা দেয়ায় আবারও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বিক্রির চাপে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। আর এ দরতপনের সূত্রপাত ঘটিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক’।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘ব্র্যাক ব্যাংকের কারণে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৪৬ টাকায় ওঠার পর কারা শেয়ার বিক্রি করে দিল? আগে কেন তারা এই শেয়ার বিক্রি করল না। ব্র্যাক ব্যাংকের পর গ্রামীণফোনের শেয়ারও বিক্রি করা হলো।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে সবাই এখন ট্রেডিংয়ে চলে গেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ নেই। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বাজার ভালো হবে না। সেই সঙ্গে বাইব্যাক কার্যকর করতে হবে।’

আগের ছয় কার্যদিবসের মতো এ দিনও লেনদেনের শুরুতেই সূচকে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে সাত কার্যদিবসে টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমল ৩৪৮ পয়েন্ট। অবশ্য এর আগে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হলে শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়।

টানা পতনের ফলে ৪ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে নেমে যাওয়া ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসএক্স হু হু করে বেড়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে চলে আসে। অর্থাৎ পতন কাটিয়ে ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৩৭৩ পয়েন্ট। তবে শেষ সাত কার্যদিবসে ফের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক প্রায় আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে।

প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় পতনের মুখে পড়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচক। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে টানা পতনে সূচকটি কমল ১২৪ পয়েন্ট। আর ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। টানা পতনে এই সূচকটি কমেছে ৬১ পয়েন্ট। সবকটি মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৯টির। আর ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে, ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১০৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে- ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফার কেমিক্যালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ১১ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, কনফিডেন্স সিমেন্ট, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা এবং সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল। অপর শেয়ারবাজর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ২২৩ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৫১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৮টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।