দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড। সোমবার (০২ মার্চ) শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) কোম্পানিটির পক্ষে ইস্যু ম্যানেজার আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস আবেদন করেছে। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনিরুজ্জামান এ তথ্য দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছেন।

খসড়া প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রবি অজিয়াটা দেশের পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা সংগ্রহ করবে। অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহ করবে রবি। এর বাইরে রবি তাদের কর্মকর্তা-কার্মচারীদের জন্য এসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে ১৩৬ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪০ টাকার শেয়ার বরাদ্দ রেখেছে। পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করবে রবি। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইপিও থেকে ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার বরাদ্দের মাধ্যমে ১৩৬ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করা হবে।

বর্তমানে রবির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা আইপিও-পরবর্তী ৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়বে পুঁজিবাজারে। ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হচ্ছে ৪ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ১২ টাকা ৬৪ পয়সা। বর্তমানে রবির মোট শেয়ারের মধ্যে অজিয়াটা ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের কাছে ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতী ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড ২৫ শতাংশ ও এনটিটি ডকোমো ইনকরপোরেশনের হাতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

রবির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালে কোম্পানির আয় হয় ৭ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এ সময় কোম্পানির পরিচালন মুনাফা হয় ৮৬৫ কোটি টাকা, যা আগের বছর ৬১ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান ছিল। ২০১৯ সালে রবিকে সুদবাবদ বড় অঙ্কের ব্যয় করতে হয়েছে। এ সময় সুদবাবদ ব্যয় হয় ৫০৫ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ২৯৭ কোটি টাকা। আগের বছর কোম্পানিটি ইডটকো বাংলাদেশের শেয়ার বিক্রি থেকে ৬৩০ কোটি টাকা মুনাফা পেলেও ২০১৯ সালে এ ধরনের কোনো আয় ছিল না।

২০১৯ সালে রবির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়ায় ৩৭৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে কোম্পানিটিকে ৩৬২ কোটি টাকা কর পরিশোধ করতে হয়। ফলে এ সময় নিট মুনাফা হয় মাত্র ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ২১৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে রবি জানায়, কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক শাসনব্যবস্থা ও উচ্চ করহারের কারণে ২০১৯ সালে কোম্পানির নিট মুনাফা ৯২ শতাংশ কমে গেছে। মালয়েশিয়াভিত্তিক এ মোবাইল ফোন অপারেটরটির ২০১৭ সালে নিট মুনাফা হয় ২৮৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর ২০১৬ সালে রবির নিট মুনাফা ছিল ৩৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। রবির আইপিওতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।

তথ্য মতে, দেশে রবির সেবাগ্রহীতার সংখ্যা এখন ৪ কোটি ৭৩ লাখ, যা দেশের মোট গ্রাহক সংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। মালয়েশিয়ার কোম্পানি আজিয়াটা রবির ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে। তার আগে ২০১৬ সালে রবি ও এয়ারটেল যুক্ত হয়ে দেশের বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেট কোম্পানিতে পরিণত হয়।