দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ধস নামায় অনেকে নিঃস্ব হয়েছে জানিয়ে বাজার দ্রুত ওঠানামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এজন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তাত্ত্বিক দিক বিবেচনা করে পুঁজিবাজার দ্রুত ওঠানামার ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অপরদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার পুঁজিবাজারের দর দ্রুত ওঠানামা করার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কোম্পানিগুলোকে অধিক পরিমাণে বাজারে নিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকা ফেরত নেয়ার বিষয়ে সরকার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জনগণের শেয়ার থাকায় তালিকাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিতে হবে। সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির ১২তম বৈঠকে এ কথা বলেন তারা। সংসদের একাধিক সূত্র দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বৈঠকে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭) বলেন, পুঁজিবাজারের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রাপ্ত পুঁজি সরাসরি শিল্পে বিনিয়োগ করা। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়াবে, দেশের প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু পুঁজিবাজার দ্রুত ওঠানামা করছে। পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষও জড়িত। এ কারণে পুঁজিবাজারে ধস নামার কারণে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তাত্ত্বিক দিক বিবেচনা করে পুঁজিবাজার দ্রুত ওঠানামার ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (এসএমই) বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি গত দু-তিন মাসে ২০ উদ্যোক্তাকে দেখেছেন, যারা শত শত কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছেন। খেলাপি ঋণের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ আছে। এতে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাও বিপর্যস্ত হয়। ঋণ খেলাপির বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর তদারকি জোরদার ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অভিজ্ঞ এবং দক্ষ লোকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। এতে মানুষ উপকৃত হবে, দেশও উপকৃত হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের রিজার্ভের মালিক জনগণ। অথচ এ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িতরা কেউ ধরা পড়েনি। তিনি এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চান এবং রিজার্ভ চুরির বিষয়টি দৃষ্টিতে আনয়নের জন্য বলেন। তিনি মানুষকে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলেন। প্রত্যেক জেলায় বিদ্যমান ট্রেড বডির মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য বলেন। কারণ মানুষ উদ্বুদ্ধ হলে এটার সম্পর্কে সচেতন হবে ও বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে।

সভাপতি বলেন, দেশের সার্বিক ব্যাংকিং সিস্টেম অর্থাৎ আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে তদারকির এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। এ দক্ষতাও বাড়াতে হবে। দেশের প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে রুগণ হয়ে গেছে। এছাড়া দেশ থেকে মুদ্রাপাচার হচ্ছে। এই মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি জোরদার করতে হবে। তিনি ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সমস্যার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার পুঁজিবাজারের দর দ্রুত ওঠানামা করার কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

সংসদীয় কমিটির সদস্য মো. মুজিবুল হক বলেন, শেয়ারবাজারে ধস, ওঠানামা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতে আরও কী পদক্ষেপ নেয়া হবে সে সম্পর্কে জানতে চান।

তিনি বলেন, কেউ ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত দেয়। আবার অনেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়। এই খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য গৃহীত উদ্যোগ এবং যারা নিয়মিত ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান।

কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মান্নান তিন জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দৃষ্টি চান। প্রথমত, এসএমই। ছোট ছোট বিনিয়োগকারী, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা প্রকল্প আছে। কিন্তু তারা এটা অনেক দিন ধরেই পাচ্ছেন না। তাই তাদের জন্য আবার চালুর কথা বলেন।

দ্বিতীয়ত, ক্যাপিটাল মার্কেট। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার চেষ্টা করার পরও যেভাবেই হোক এটা তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। তিনি এদিকে নজর দিতে বলেন। তৃতীয়ত, পোশাক শিল্প। এ শিল্প আমাদের প্রাণ। এ শিল্প বাঁচাতে হলে ডলারের দাম বাড়াতে হবে। অন্যথায় একটা রেট দিতে হবে।

কমিটির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন কিনা- এ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে নাকি সরকারের নির্দেশনা নিয়ে করতে হয় বিষয়গুলো জানতে চান। এপ্রিল থেকে সুদ ৯ শতাংশ ফিক্সড করে দেয়া হয়েছে। এটা এ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নাকি সরকারের চাপানো কোনো নীতি তা জানতে চান। তিনি ঋণ খেলাপির বিষয়ে আমরা যে ফিগারটা পাই সেটা ঠিক কিনা ইত্যাদি জানতে চাওয়ার পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করে। এছাড়া কিছু কিছু কাজ সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে করতে হয়। যেমন-মুদ্রানীতি এবং আর্থিক নীতির বিষয়ে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকের মার্কেট বেইজড সুদহার করা হয়েছে, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে সব ব্যাংক মিলিয়ে সাড়ে ১০ হাজার শাখা আছে। বর্তমানে ক্লাসিফাইড লোন অনেক কমে গেছে এবং অর্থের তারল্য সংকট একেবারেই নেই।