দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের প্রত্যেকটি তফসিলি ব্যাংক শর্ত ছাড়াই দুইশত কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, এটি বাস্তবায়নে অধিকাংশ তফসিলি ব্যাংক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে সরকারি-বেসরকারি তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক।

তিন ব্যাংকের প্রত্যেকটি (ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক) নিজস্ব উৎস থেকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করছে। এতে আস্থাহীন পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে যে সংশয় ছিল, তার অবসান ঘটছে। তারা অতিশীঘ্রই বিনিয়োগ নির্দেশনা বাস্তবায়নে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার এক মাসের মাথায় ব্যাংক তিনটি এ তহবিল গঠন করলো। রোববার (৮ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, প্রতিটি তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা দেয়ায় কথা রয়েছে। সে হিসেবে ৫৯টি তফসিলি ব্যাংককে ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার এই ঋণ তহবিল দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনার পর পরই বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে বাজারে ফিরে এসেছিল। এতে টানা কয়েকদিন বাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়ে রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছিল।

এদিকে, নির্দেশনা জারির পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও এ বিশেষ তহবিলের জন্য রেকানো ব্যাংক আবেদন করেনি। এর মাধ্যমে বিনিয়োগ নির্দেশনা বাস্তবায়নে তফসিলী ব্যাংকগুলোর কিছুটা অনীহা রয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে না।

এসব কারণে বাজারে লেনদেনের যে সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল, তা ধরে রাখা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ তহবিলের অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘ দিনের অস্থিরতা কাটবে, যা ভবিষ্যতে বাজারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিন ব্যাংকই নিজস্ব অর্থায়নে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এছাড়া আরও পাঁচটি ব্যাংক তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করছে। সেগুলো হচ্ছে- ন্যাশনাল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক ইতোপূর্বে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুবিধায় নেয়া ৫০ কোটি টাকা নবায়ন করেছে। ন্যাশনাল ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০ কোটি টাকার নিজস্ব অর্থায়নে তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে তহবিলের আকার বাড়াবে। এছাড়া রূপালী ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা এবং ঢাকা ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে ধারাবাহিক দরপতন ঠেকানো ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে শেয়ারবাজারে মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের তারল্য সংকট মন্দা পরিস্থিতিকে আরো তরান্বিত করেছে। তবে মাঝে মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের নানা উদ্যোগ বাজারে বড় ধরনের ধ্বস থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু যখন উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হয় তখন ফের অস্থির হয়ে যায় বাজার। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

তবে অতি শিগগিরই ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর মাধ্যমে এই তহবিল সাধারণ বিনিয়োগকারী, অপ্রাতিষ্ঠানিক তথা সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে বিনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি করা। তাতেও বাজার স্থিতিশীলতায় ফিরবে, যা গোটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।