দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নতুন আমানতের তুলনায় দ্বিগুণ হারে ঋণ বিতরণ করছে বেশিকিছু ব্যাংক। মানছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও। আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করে তারা খালি করছে ব্যাংকের ভল্ট। এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে গ্রাহকদের আমানত। বিভিন্ন রকম সুযোগ দেওয়ার পরেও বন্ধ হচ্ছে না আগ্রাসী ব্যাংকিং। নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ঋণ বিতরণ করছে ১২টি ব্যাংক। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের ৪ ব্যাংকের আগ্রাসী বিনিয়োগ রয়েছে। গতবছর একাধিকবার ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সমন্বয়ে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ বিতরণ ও আমানতের অসামঞ্জস্যতার কারণে ব্যাংকগুলো এডিআর সমন্বয় করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ শেষে সীমা অতিক্রম করা পুঁজিবাজারের চার ব্যাংক হলো: এবি ব্যাংক (ইসলামি), এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক (ইসলামি)। এছাড়া আর ৮ ব্যাংকের আগ্রাসী বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাংক গুলো হলো: অগ্রণী ব্যাংক (ইসলামি), বেসিক ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি গেøাবাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

একশ’ টাকা আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারবে তা ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সালের শেষ দিকে হঠাৎ করে ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপক বাড়তে থাকায় ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি এক নির্দেশনার মাধ্যমে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৮৯ শতাংশ। তবে গত বছরের (২০১৯) ১৭ সেপ্টেম্বর আগের (প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ৮৫ ও ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশ) হারে ঋণ বিতরণে অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকাররা জানান, বেশি সুদ দিয়েও আশানুরূপভাবে আমানত পাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। এ কারণে এডিআর বেড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের এডিআর আগে থেকেই নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকলেও আমানতের তুলনায় ঋণ বাড়ানো অব্যাহত আছে। যদিও বেসরকারি খাতের তুলনায় সরকারি খাতের ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি। তার পরেও বিনিয়োগের চাহিদা অনুযায়ী আমানত পাওয়া যাচ্ছে না।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং উইং ১১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ করেছে ১৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী তাদের এডি রেশিও দাঁড়িয়েছে ১৬২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এদিকে বেসিক ব্যাংকের এডিআর পৌঁছেছে ১০৮ শতাংশে। ব্যাংকটি ১৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করলেও বিনিয়োগ করেছে ১৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের ইসলামি উইংয়ের এডিআর এখন ৯৬ শতাংশ। যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। এদিকে ৯০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এক্সিম ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত। ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এডিআর একই। ব্যাংক দুটির ঋণ-আমানত অনুপাত ৮৮ শতাংশ।

দুর্নীতির জন্য বহুল আলোচিত পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) ঋণ-আমানতের অনুপাত ১১২ শতাংশ। যদিও ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকটির সব রকমের ঋণ বিতরণ বন্ধ। শুধু আমানত সংগ্রাহের অনুমতি থাকলেও এডিআর সমন্বয়ে তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। সমাপ্ত বছরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইসলামি উইংয়ের এডি রেশিও ১০৫ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৮৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এডিআর ৯৭ শতাংশ।