এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার আতঙ্কে বড় ধসের একদিন পরই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। দুই বাজারেই মূল্যসূচকের উল্লম্ফন হয়েছে। গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। দিন শেষে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ১৫৬ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পদক্ষেপের পরও পুঁজিবাজারে পতন ঠেকানো যাচ্ছিল না।

টানা কয়েকদিন পতনের পর সোমবার ডিএসইএক্স এক দিনেই ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ পড়ে যায়; সূচক হারায় ২৭৯ পয়েন্ট। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৪৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে হয়েছে ১২ হাজার ৬৭২ পয়েন্টে। তবে দুই বাজারেই লেনদেন কমেছে।

গত সোমবার যেভাবে বিশাল দরপতন হয়েছে গতকাল সেভাবেই বড় উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজারে। আরো হয়তো বাজার বাড়বে কিন্তু মাঝখান থেকে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই দরপতন পুঁজিবাজারে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গত সোমবার করোনা আতঙ্কে একদিনেই ডিএসই’র ২৭৯ পয়েন্টের পতন হয়। বিনিয়োগকারীদের মনে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করে। কিন্তু করোনা নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই এমন খবর বিভিন্ন মহল থেকে প্রচার হওয়ার পর থেকে সেই আতঙ্ক অবশেষে কেটে যায়। ফলে গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে একদিন পরেই উল্টো চিত্র দেখা যায়।

বাজার বিশ্লেষক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, গত সোমবার দেশে করোনাভাইস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ায় বাজারে বড় পতন হয়েছিল। মঙ্গলবার সে আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। সে কারণেই বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। “প্যানিকড সেল (আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি) কখনই স্থায়ী হয় না। আমাদের বাজারেও তাই হয়েছে।”

জানুয়ারিতে বড় ধসের পর পুঁজিবাজার জাগাতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ব্যাংকগুলোকে ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের সুযোগ দেওয়ার পর থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। টানা কয়েক দিন লেনদেনের পাশাপাশি সূচক বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাজারে ফের লেনদেন ও সূচক কমতে শুরু করে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেছেন, ব্যাংকগুলোর উচিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান জানানো। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগমুখী হলে পুঁজিবাজারের চিত্র পাল্টে যাবে। গত জানুয়ারি মাসে বাজারে ‘ফ্রি ফল’ হতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে যে ৬টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল বাজারে তারল্য বাড়াতে বিশেষ তহবিল গঠনেরর বিষয়।

সে আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক নমনীয় শর্তে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল সুবিধা দিলেও এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সে সুবিধা কাজে লাগানোর বিষয়ে সক্রিয় হয়নি। এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অসম্মান করার সামিল। ব্যাংকগুলোর উচিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে এখনই তহবিল সুবিধা গ্রহণ করে বিনিয়োগে সক্রিয় হওয়া। আশা করি আজকের পরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগমুখী হবে।

রকিবুর রহমান বলেন, আজকে বাজারে ফ্রি ফল হয়েছে। বাজার কোনো সাপোর্টই পায়নি। শেয়ারের বর্তমান মূল্যস্তর বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেকেই হয়তো সেটা বুঝেন না অথবা দীর্ঘ মেয়াদে অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য তাদের নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তথা ব্যাংকগুলোর এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। মূল্য আরও কমলে বিনিয়োগ করবেন-তারা যদি এমন মনোভাব নিয়ে বসে থাকেন তাহলে সেটি হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

ডিএসইর এমডি কাজী সানাউল হক বলেন, ‘গত সোমবার করোনাভাইরাসের কারণে দরপতন হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’ ‘ব্যাংকগুলোও চাচ্ছে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে। সার্কুলারের কিছু জটিলতা রয়েছে। তাতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসতে বলেছি। আমরাও বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারে সংশ্লিষ্ট জায়গায় এই সমস্যাগুলো তুলে ধরব। ব্যাংকগুলো যাতে দ্রুত বিনিয়োগ করে সে জন্য তাগাদা দেব।’

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ১৪৮ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই৩০ সূচক ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বা ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬০ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সোমবারের চেয়ে ১৭১ কোটি ১ লাখ টাকা কম। সোমবার এই বাজারে ৪৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।। মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২৩টির, কমেছে ১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবার ২৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮০টির, কমেছে ৪৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির দর।