দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে তিনটি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। আরও ৬টি ব্যাংক তহবিল গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের জন্য আগামী পর্ষদ সভাতেই ব্যাংকগুলো তহবিলের বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। বিশেষ তহবিল গঠন করা ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- সোনালী, রূপালী ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। আর আগামী পর্ষদ সভায় তহবিল অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে- প্রিমিয়ার, মার্কেন্টাইল, ট্রাস্ট, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি এবং ইউসিবিএল।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন। বৈঠকে অংশ নেয়া ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৈঠকে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সোনালী, রূপালী ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে।

তিনি জানান, বিশেষ তহবিল গঠন না করলেও ঢাকা ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। শিগগিরই শেয়ারবাজরে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আরও বাড়বে। মোহাম্মদ আলী আরও জানান, প্রিমিয়ার, মার্কেন্টাইল, ট্রাস্ট, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি এবং ইউসিবিএল এই ছয়টি ব্যাংক আগামী পর্ষদ সভাতেই বিশেষ তহবিলের বিষয়টি উপস্থান করবে বলে বৈঠকে জানিয়েছে।

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য জানান, বিশেষ তহবিল গঠন নিয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলো এক ধরনের জটিলতার মধ্যে রয়েছে। এ জটিলতার কারণে তারা বিশেষ গঠন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বৈঠকের আলোচনা খুবই পজেটিভ। ব্যাংকগুলো দ্রুতই শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দিতে বিনিয়োগ বাড়াবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের তহবিল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু আইনগত সমস্যার কথা বৈঠকে জানিয়েছেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবে। সেই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তুলে ধরার জন্য আনুরোধ করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসলে বিষয়টি তুলে ধরবো। শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ২০০ বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়।

নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুযোগ দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো এখনো উল্লেখযোগ্য সাঁড়া না দেয়ায় বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিএসইর একাধিক পরিচালক। তারা কেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিপালন করছেন না, তা ব্যাংকের এমডিদের কাছে জানতে চান। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের আহ্বান করেন তারা।

এদিকে বৈঠক শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে একটি ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে। আমরা তাদেরকে শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বলেছি। একইসঙ্গে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, তা জানানোর জন্য বলেছি। যা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজার নেতিবাচক ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনার পরে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাস ইস্যুতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অবস্থা জানতে আজকে বৈঠক করা হয়।

কাজী সানাউল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়। আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান করেছি। তারাও বিনিয়োগে আন্তরিক। তাই শেয়ারবাজারে দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছি।