দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দামে কৃত্রিম সংকট সাজিয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানো ও কারণ ছাড়া অব্যাহত বিক্রির মাধ্যমে দাম কমানোর অভিযোগে দুই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানির সাত কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে আরেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি। সম্প্রতি ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম-এর আদালতে এই মামলা করা হয়। যাতে সাত কোটি ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। মামলার সূত্র ধরে অভিযুক্ত সাত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত। আগামী ২৮ মে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম-এর আদালতে তাঁদের হাজির হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, শেয়ারের মূল্য কারসাজির কারণ দেখিয়ে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও এজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তরা হলেন এজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী ইমাম, ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। অন্য পাঁচজন ব্যক্তি হলেন আসাদ খান, আসিফ খান, শাহেদা শারমিন, মাসুদ খান ও ওয়াসিম খান।

অভিযুক্তরা বলছেন, ফান্ডের ম্যানুপুলেশন নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। ওই মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার কেনাবেচায় আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। আইনের মধ্য থেকে শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেও অভিযোগ জানানো হয়েছিল কিন্তু কোনো সত্যতা পায়নি।

ফান্ডটিতে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত চাওয়ায় হয়রানির উদ্দেশ্যে এমনটা করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশ করে ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের ইউনিট ব্যাপকভাবে বিক্রি করে দাম কমিয়ে কম্পানির আর্থিক ক্ষতি করেছে বলেও অভিযোগ।

সুনামহানি ও পত্রকোষ (পোর্টফোলিও) ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণে আদালতে অভিযুক্তদের কাছে সাত কোটি ১৮ লাখ টাকা (মামলার দিন থেকে এই অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ সুদসহ) ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে এলআর গ্লোবাল।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিবাদীরা সুদীর্ঘ সময় ধরে ডিবিএইচ ও গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার কিনতে থাকে। এর ফলে বাজারে কৃত্রিম চাহিদা শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। বাদী প্রতিষ্ঠানের সুনাম বিনষ্টের উদ্দেশ্যে উচ্চমাত্রার দামে ধরে রেখে নিজেদের যোগসাজশ করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। অভিযুক্তরা ফান্ড দুটির ইউনিট ক্রয় করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়। পরবর্তী সময় উচ্চদামে বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়ে শেয়ারের দামে ধস নামায়। শেয়ারের দামের ম্যানুপুলেশন ঘটায়।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বিবাদীরা গ্রিন ডেল্টা ও ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ডের কৃত্রিমভাবে মূল্যবৃদ্ধি করে। অন্য দুটি ফান্ডের শেয়ার বিক্রি করে দাম কমিয়ে দেয়। এতে বিনিয়োগকারীরা দাম কমে যাওয়া শেয়ার ছেড়ে উচ্চদামের গ্রিন ডেল্টা ও ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ শুরু করে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে এজের প্রধান নির্বাহী আলী ইমাম বলেন, ‘ফান্ডের শেয়ার কেনাবেচায় কোনো নিয়মনীতির লঙ্ঘন হয়নি। আইনে যেভাবে আছে, সেভাবেই শেয়ার কেনা হয়েছে। ইউনিটের দাম কম থাকলেই তো কিনেছি। এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়নি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও একই অভিযোগ জানানো হয়েছিল কিন্তু সেটার সত্যতা মেলেনি। ফান্ডের শেয়ারে কোনো ম্যানুপুলেশন হয়নি।’