দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে বুধবার থেকে ব্যাংকগুলো একযোগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগমুখী হবে এমন খবরে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। কারন টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হতে চলছেন। এমন সময় সুসংবাদে বিনিয়োগকারীদের মাঝে কিছুটা দু:চিন্তা কাটছে।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজার অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ এই অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। যার ফলে শেষ ১২ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বাজার মূলধন ৪৪ হাজার কোটি টাকা উদাও হয়ে গেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া বিশেষ তহবিলের অর্থ যদি ব্যাংকগুলো একযোগে বিনিয়োগ শুরু করে তাহলে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে তেমনি পুঁজিবাজারের চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার তহবিল প্রদানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ ব্যাংক এখনো ফান্ড গঠন করতে পারেনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন। যার ফলে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হচ্ছে। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ফিরিয়ে বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে নিয়ে আসতে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বুধবার থেকে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করবে। সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ও কমিশনারগনসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫০টির উপরে ব্যাংক রয়েছে, সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের ২০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। কিন্তু এগুলো একসাথে কেনা হবে না। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি ব্যাংক ওই টাকার শেয়ার কিনবে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি মনিটরিং করবে। প্রতি সপ্তাহে এ নিয়ে একটি মিটিংও করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংকগুলোর এক সাথে বিনিয়োগের প্রসঙ্গে এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী গোলাম মাওলা বলেন, ব্যাংকগুলোর একযোগে বিনিয়োগের খবরে কিছুটা দু:চিন্তা কাটছে। গত এক মাসে আমাদের পুঁজির ৮০ শতাংশ হারিয়েছি। এ অবস্থায় ভালো সংবাদ শুনলে কিছুটা হলেও তো ভাল লাগবে। তাছাড়া সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তকে আমরা খুব পজেটিভলি নিয়েছি।

যেহেতু অর্থমন্ত্রীর ডাকে ব্যাংকগুলো সারা দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীও পুঁজিবাজারের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক, সে কারনে আমাদের মনে একটি আশার জন্ম নিয়েছে। আমরা সাধারন বিনিয়োগকারীরা একটু স্বস্তি পাচ্ছি কারন স্থায়ীভাবে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর মত একটা অবস্থান দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে অর্থ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সার্কুলার জারি করেছে, ব্যাংকগুলো যদি এখান থেকে টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে তাহলে আমরা মনে করি বাজারে একটা গতি ফিরে আসবে এবং বাজার স্বাভাবিক হবে। মুজিববর্ষে আমরা আশা করতে চাই, এই পুরো বছরটাই বাজার স্বাভাবিক থাকবে।

এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো একযোগে বিনিয়োগ করবে এটা বাজারের জন্য সুখবর। ব্যাংকগুলোর এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে অর্থ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সার্কুলার জারি করেছে আশা করি খুব দ্রুত পুঁজিবাজার বদলে যাবে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকগুলো যেন এই টাকা পুঁজিবাজার ছাড়া অন্য কোন খাতে বিনিয়োগ না করে এই বিষয়ে মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সজাগ থাকতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ব্যাংকগুলোর উচিত ছিল আরো আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করা। এক সপ্তাহ আগেও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা এত ক্ষতির শিকার হতেন না। যাই হোক তারপর ব্যাংকগুলো যদি পরিপক্কভাবে (মেচিউরড) বিনিয়োগ করে তাহলে পুঁজিবাজারের অবস্থা পরিবর্তিত হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আসতে হবে। যদি একটু দর বাড়তেই শেয়ার ছেড়ে দেয় তাহলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এই মূর্হূতে ডিএসই’র প্রধান সূচক থাকার কথা ছিল অন্তত ১০ হাজার পয়েন্টে। সেখানে সূচক ৩৭০০ যা খুবই দু:খজনক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো এতদিন যে নিরবতা পালন করেছে সেটি আর উল্লেখ করতে চাই না। আশা করি বুধবার থেকে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করলে চিত্র পরিবর্তন হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য কোনো শর্ত ছাড়াই ৫ বছরের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে বাজারকে সহায়তা করবে এটিই আমার প্রত্যাশা।