দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে বুধবারও বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৬৮ পয়েন্ট হারিয়েছে। সূচক পতনের হার ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে এমন পতনের আগে সকালে লেনদেনের শুরুতে সূচকটি ১০৭ পয়েন্ট বেড়ে ৩৮৮০ পয়েন্টে উঠেছিল। ওই অবস্থান থেকে পতন হিসাব করলে আজ সূচক হারিয়ে প্রায় ২৮৯ পয়েন্ট। করোনাভাইরাসের আতঙ্কেই দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। গত সোমবারও এ সূচকের পতন হয়েছিল প্রায় ১৯৭ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এ অবস্থায় বিকাল ৪টায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ বাজার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক হারালো ১১৭১ পয়েন্ট। অর্থাৎ গত এক মাসে সূচক পতন হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সূচকের আজকের এ অবস্থান ২০১৩ সালের ৯ মের পর সর্বনিম্ন।

গত এক মাসের প্রায় টানা দরপতন ঠেকাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বুধবার থেকে বিনিয়োগ শুরু করবে-অর্থমন্ত্রী, বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি এবং ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির গত সোমবার সন্ধ্যায় ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমন ঘোষণাও দরপতন ঠেকাতে পারেনি। করোনো আতঙ্কে দরপতন ঘটনায় ফিলিপাইন এরইমধ্যে সেদেশের শেয়ারবাজার বন্ধ ঘোষণা করেছে। ভারতেও সম্প্রতি লেনদেন বন্ধ করা হয়েছিল।

আজ অবশ্য ব্যাপক দরপতনে দিনের লেনদেন শেষ হওয়ার আগে ছিল ভিন্ন চিত্র। বাজারের লেনদেন শুরু হয়েছিল বেশ ঊর্ধ্বমুখী ধারায়। ব্যাংকগুলো বুধবার থেকে শেয়ার কেনা শুরু করবে- এমন আশ্বাসে ভরসা রেখে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ সাড়ে ১০টায় বাজার খুলতেই বেশি দামে শেয়ার কেনা শুরু করার কারণে বেড়েছিল শেয়ারদর ও সূচক।

বাড়তি নামে তাদের শেয়ার কেনার কারণে লেনদেনের প্রথম চার মিনিটেই প্রায় সব শেয়ারের দর বেড়ে যায়। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচক ১০৭ পয়েন্ট বেড়ে ৩৮৮০ পয়েন্টে ওঠে। এ সময় লেনদেনে আসা ৯৫ শতাংশেরও বেশি শেয়ার দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায়।

এরপরই সূচক দ্রুত নিম্নমুখী হতে থাকে। বেলা ১১টা ৩ মিনিটে শুরুর বৃদ্ধি পাওয়া ১০৭ পয়েন্টের পুরোটা খুঁইয়ে সূচক ঋণাত্মক অবস্থায় চলে যায়। সূচক নিম্নমুখী হলেও এ সময় লেনদেনে আসা ৫৬ শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায়।

বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি সত্ত্বেও সূচকের নিম্নমুখী অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোনসহ বৃহৎ মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন শুরু হলে সূচকের পতন শুরু হয়। এসব শেয়ারের দরপতনের কারণ ছিল বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি।

সূচকের পতন বাড়তে থাকলে দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। ফলে দরপতন ত্বরান্বিত হয়। পতন ঠেকাতে কোনো ব্যাংক শেয়ার কিনেছে কি না, এ তথ্য জানতে চাইলেও কোনো পক্ষই তা জানাতে রাজি হয়নি। দুপুর আড়াইটায় দিনের লেনদেন শেষে দেখা যায়, প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৬ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩৩টি বা সাড়ে ৯৩ শতাংশের দরপতন হয়েছে। বিপরীতে মাত্র ১৩টি শেয়ারের দর বেড়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইতে আজ লেনদেনের বিভিন্ন সময়ে ১২৭টি শেয়ার সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে ৬১টি লেনদেনের শেষ পর্যন্ত ওই দরে স্থির এবং বিক্রেতা শূন্য অবস্থায় ছিল।

বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রসহ আমেরিকান বাজারগুলো ছিল বেশ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও আজ এশিয়ান শেয়ারবাজারগুলোর বড় দরপতন ছিল। বিদেশিরা আশঙ্কা করছে, করোনা প্রাদুর্ভাব বিশ্ব বাজারকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা সহসাই কাটবে না।