দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান তিনি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। পুঁজিবাজারের চলমান বিষয় নিয়ে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সাথে আলাপকালে নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। পুঁজিবাজারে মুল সমস্যা আস্থা।

প্রথমত বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে যে কোন মুল্যে। কারন আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে যতই ভাল সিদ্ধান্ত নেয়া হোক পুঁজিবাজার ভাল হবে না।

কারন দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার অস্থিরতা থাকায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট প্রকট আকার ধারন করছে। এ অবস্থায় তারল্য সংকট দূর করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

গত সোমবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় অর্থমন্ত্রীকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি) ও অ্যাসোসিয়েশর অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে তফসিলি ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।

বুধবার থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুসারে এ বিনিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার পুঁজিবাজারে মাত্র আটটি ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে। ব্যাংকের কাছ থেকে কাঙ্খিত বিনিয়োগ না আসার পাশাপাশি করোনাভাইরাস আতঙ্কে বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১৬৯ পয়েন্ট হারিয়েছে।

গত সোমবারের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যাংকাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছে। পুঁজিবাজারকে ঠিক জায়গায় রাখার জন্য বেসরকারি ব্যাংকসহ সব সরকারি ব্যাংক যথাসাধ্য চেষ্টা করবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।

ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারও সেদিন জানিয়েছিলেন, সব ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। তবে সবাই একসঙ্গে শেয়ার কিনবে না, বরং পুঁজিবাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে কিনবে।

গতকালই ব্যাংকগুলো শেয়ার কেনা শুরু করবে। আর ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি মনিটরিং করবে। প্রতি সপ্তাহে বিনিয়োগের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হবে।

বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার পরই ১০৬ পয়েন্ট বেড়েছিল। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত শেয়ার বিক্রির চাপে দিন শেষে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ পয়েন্ট হারায় ডিএসইএক্স। অবশ্য বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ সামলাতে এর বিপরীতে ক্রয়চাপ সেভাবে ছিল না। গতকাল সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাত্র আটটি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণও খুব বেশি ছিল না।

একেকটি ব্যাংক ২ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে গতকাল দিনভর বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও খুব বেশি ব্যাংক বিনিয়োগে সাড়া দেয়নি।

ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কাঙ্খিত বিনিয়োগ না আসার বিষয়ে বিএবি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার জানান, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো বুধবার থেকে শেয়ার কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অনেক ব্যাংকই প্রতিশ্রুতি রাখেনি।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের এক্সিম ব্যাংক শেয়ার কিনেছে। আরো সাতটি ব্যাংক শেয়ার কিনেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আমি জেনেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি ব্যাংকগুলোর শেয়ার কেনার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার কথা। তবে আমি এখনো আশাবাদী। আগামী সপ্তাহে ব্যাংকগুলো শেয়ার কেনা শুরু করবে।

পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাবও দেখা যাবে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সাড়া দিলেও তালিকাভুক্তির পর ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন সংগ্রহ করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ব্যাংকগুলোর মোট পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে এসে ব্যাংকগুলোর মোট পরিশোধিত মূলধন দাঁড়ায় ১০ হাজার ৭৩৭ কোটিতে। আর সর্বশেষ এ বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মোট পরিশোধিত মূলধন ৩০ হাজার ১২৮ কোটি টাকা হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর বিভিন্ন সময় রাইট শেয়ার ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের মূলধন বাড়িয়েছে।