দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেকটা নিস্ক্রিয় ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী বছরে আর্থিক খাতসহ তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল।

তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত  কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের অধিকাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রিুয়ারি মাসে এ খাতে তালিকাভুক্ত ২২টির মধ্যে ১২টি বা ৫৪.৫৪ শতাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে।

৭টি বা ৩১.৮২ শতাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে। ২টি বা ৯.০৯ শতাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অপরিবর্তীত রয়েছে।  আর ১টি বা ৪.৫৫ শতাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ করেনি।

এ খাতে তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানি হলেও বর্তমানে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস অবসায়নের পথে রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সার্বিক দিক বিবেচনা ও বিচার বিশ্লেষন করে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। যে খাতে কোম্পানিগুলোর আয়ে ইতিবাচক খবর রয়েছে, সেসব খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ধাবিত হতে থাকে। এছাড়া দীর্ঘ মন্দা পরিস্থিতি থেকে পুঁজিবাজারকে উত্তরণের লক্ষ্যে নানামুথী পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণায় এ খাতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো: বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, ফারইস্ট ফ্যাইনান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিপিএস ফাইনান্স, আইডিএলসি, আইপিডিসি, প্রাইম ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও উত্তরা ফাইন্যান্স।

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০১ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৩৭.২৭ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭.২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.১৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৪.২৪ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.৪৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৪৭.৫৮ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭.৬৫ শতাংশ। ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.৫৪ শতাংশ।

জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৪.১৭ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৭১ শতাংশ। ফারইস্ট ফ্যাইনান্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১২.২৫ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.২৮ শতাংশ।

ফার্স্ট ফাইন্যান্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.১২ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২০.৫৭ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৬৯ শতাংশ। জিপিএস ফাইনান্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.২৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২০.৬৩ শতাংশ।

আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৯০ শতাংশ। আইডিএলসি’র প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২০.৫৩ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫৭ শতাংশ। আইপিডিসি’র প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.২১ শতাংশ।

জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৮.৭৭ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৯৮ শতাংশ। প্রাইম ফাইন্যান্সের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৬ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১১.৫৪ শতাংশ।

আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৬০ শতাংশ। ইউনিয়ন ক্যাপিটালের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.১২ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২১.৮৪ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৯৬ শতাংশ।

উত্তরা ফাইন্যান্সের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৩৪.৯৭ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.০৪ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া কোম্পানিগুলো হলো: ফাস ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা, মাইডাস ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।

ফাস ফাইন্যান্সের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.১৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২১.৬৫ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১.৬৪ শতাংশ।

লংকাবাংলার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৩.০৮ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৯৪ শতাংশ। মাইডাস ফাইন্যান্সের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.০৩ শতাংশ।

জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৫.৩০ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫.২৭ শতাংশ। ন্যাশনাল হাউজিংয়ের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.২৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১০.৯০ শতাংশ।

আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৬৩ শতাংশ। ফিনিক্স ফাইন্যান্সের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.৪৬ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৩.০৯ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৬৩ শতাংশ। প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.০৬ শতাংশ।

জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৫.৫৬ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫.৫০ শতাংশ। ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.১৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২০.৮৬ শতাংশ।

আর ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৭৩ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ স্থিতিশীল থাকা কোম্পানিগুলো হলো: ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস।

চলতি বছরের জানুয়ারির মতোই ফেব্রুয়ারিতে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে ১.৭০ শতাংশ ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে ২৬.৭৮ শতাংশ অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি ইসলামিক ফাইন্যান্স।