মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজার দীর্ঘসময়েও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। সম্প্রতি ফের ধস দেখা দিয়েছে। দেওয়া হয়েছে বেশকিছু প্রণোদনাও। কিন্তু সেসব কোনো কাজে আসছে না।

২০১০ সালে ধসের পর বিশেষজ্ঞরা বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন। কিন্তু দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও তার বাস্তবায়ন নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে যে পরিস্থিতি, তা ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসকেও হার মানিয়েছে। তাদের মতে, বাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। ভালো কোম্পানি এলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। জানা গেছে, বেশকিছু লাভজনক কোম্পানির শেয়ার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি সেসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে এলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে শেয়ারবাজার।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পাওয়ার সেক্টর থেকে লাভজনক সাত প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে আনা হবে, বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পরিমাণ বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, ‘বাজার শক্তিশালী করতে সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে বাজার বাজারের মতো থাকবে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে না। আমরা যদি কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখি, এর উপকার পাবে জনগণ। সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে হস্তান্তরে তদারকি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

কমিটির কার্যক্রমের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৮ মার্চ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সরকারি লাভজনক কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ,

নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বিআর পাওয়ারজেন লিমিটেড এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, এসব কোম্পানির ব্যালান্সশিট আমাদের অ্যাসেস করা হচ্ছে। এখন থেকে ১০ বছর আগের অ্যাসেটের দাম, আর এখনকার দাম এক নয়। এখন কারেন্ট প্রাইসে এগুলো রিভ্যালু করতে হবে। আমাদের সম্পদের পরিমাণ রিভ্যালু করতে হবে। রিভ্যালু করতে যে সময় লাগবে, সেই সময় কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে।

এ বিষয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে তার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তার পরও পেছনে যে কয়টি কারণ আছে, এর মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম থাকা অন্যতম।

বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে ভালো কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে শেয়ারবাজারে আনার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বড় কোম্পানি শেয়ারবাজারে এলে বাজারের গভীরতা বাড়বে।