মর্তুজা মিশু: আমরা দুনিয়া জুড়ে অনেক ধরনের প্রাইসিং দেখেছি। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো ক্যপিটাল এসেট প্রাইসিং মডেল(CAPM)। বর্তমানে নতুন করে বাংলাদেশে ফ্লোর প্রাইস খুব শোনা যাচ্ছে। আগে ফ্লোর প্রাইস শুধু বুক বিল্ডিংয়ে শোনা গেলেও বর্তমানে সেকেন্ডারি মার্কেটে ফ্লোর প্রাইস আনা হয়েছে। গত কয়েকদিনে শেয়ার বাজারে কারন ছাড়াই পড়তে থাকার কারনে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে বাজারে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের মাধ্যমে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়।

ফ্লোর প্রাইস কি?

ফ্লোর পাইস হলো সরকার যেকোন বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। ফ্লোর প্রাইস হলো যেকোন সেবা বা পন্যের সরকার নির্ধারিত দাম যা ঐ পন্যের ভারসাম্য বা ভারসমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় যার নিচে দাম নামতে না পারলেও উঠার বিস্তর সুযোগ থাকে। পৃথিবীতে সবদেশেই অনেক পন্যের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা আছে।

যেমন স্কটল্যান্ডে অ্যালকোহল, কানাডায় লাইভ স্টক জাতীয় পন্য, কিয়েটো প্রটোকল এ কার্বন এমন অনেক পন্যে ফ্লোর প্রাইস ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য ফ্লোর প্রাইস একদম নতুন হলেও এটা বিশ্বব্যাপী চাহিদা- যোগান নিয়ন্ত্রণে সমাদৃত। যে পন্যে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হয় সে পন্যর বাজারে চাহিদা বা যোগান যেমনই হোক থাকে নিয়ন্ত্রণে। তাই আপাত দৃষ্টিতে, বলতে পারেন বাজার মোটামোটি সরকারের নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে।

কিভাবে নির্ধারিত হলো ১৯ মার্চের আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস?

এটা সবসময়ই সরকার নির্ধারিত। তাই কখন কিভাবে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারন হবে সেটা সরকারাই ঠিক করবে। মনে রাখবেন, ফ্লোর প্রাইস তখনই নির্ধারণ করা হয় যখন বাজার অগোছালো থাকে যেমনটা আছে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার।

১৯ তারিখের আগের ৫ কার্যদিবস এর একটা শেয়ারের মূল্যকে গড় করে নির্ধারিত হয়েছিলো ১৯ ই মার্চ ২০২০ এর শেয়ার দাম। সূচকের হিসেবটিও ছিলো একই। আর এই ফ্লোর প্রাইসের নিচে শেয়ার বা ইনডেক্স আশার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে। তাই আপততো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা।

আগামীর বাজার কেমন হতে পারে?

পৃথিবী জুড়ে শেয়ার বাজার অর্থনীতির প্রধান আকর্ষন হলেও বাংলাদেশে এটি যেন গলার কাঁটা। যেভাবে সরকার সাপোর্ট দিক না কেন কোনভাবে এই বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারন আস্থার সঙ্কট আর এই আস্থার সঙ্কট তৈরিতে আছে পুঁজিপতিদের সক্রিয়তা। প্রনেোদনাসহ নীতিগত সহায়তা দিয়েও কোনভাবেই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বাজারে।

এমনিতেই পড়তি বাজার তার উপর করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছিলো পুঁজিপতিরা। অবশেষে, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি আরোপ করার মাধ্যমে এই যাত্রায় বেছে গেলে শেয়ার বাজার। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বিনিয়োগকারীরা। এই পর্যায়ে সবার মাঝে কম বেশি বিশ্বাস এইটুকু তৈরি হয়েছে যে এই সূচক বা দাম যেহেতু বেইজ প্রাইস তাই এর উপরে মার্কেট উঠতে বাধ্য৷

তাই সবচেয়ে মরনাস্ত্র ফোর্স সেল আপততো আর হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রায় ১২ টি ব্যাংক প্রণোদনা ফান্ড ঘঠন করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছে তাই তার এই ফান্ড বাজারে বিনিয়োগ করবে। এছাড়া লোয়ার প্রাইসে লাগানো হয়েছে ৫% সার্কিট ব্রেকার। অর্থাৎ, এখন কোন শেয়ার একদিনে ৫% এর বেশি কমতে পারবে না আর বাড়তে পারবে আগের মতোই ১০%৷ আর এই আইন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি। তাই বাড়ার জন্যে যেকোনো শেয়ারের রয়েছে দ্বিগু সম্ভাবনা। এচাড়া করোনা আসছে, মার্কেট আরো পড়বে এই ধারনা থেকে যারা শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে ছিলো তারা দ্বিগুন হিম্মত নিয়ে মার্কেটে আসবে।

সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত?

বাংলাদেশে পিপিপি শব্দটা খুবই পরিচিত। একটা সরকারী প্রজেক্ট যদি পিপিপি এর মাধ্যমে হতে পারে তাহলে শেয়ারের মালিকানায় কেন নয়। অনেক কোম্পানি তাদের শেয়ার ধারনে বাধ্যবাধকতা না মেনে নামে মাত্র শেয়ার ধারন করছে। যেহেতু, পরিচালকের হাতে এককভাবে ২% ও সম্মিলিতভাবে ৩০% শেয়ার নাই তাই উক্ত কোম্পানির প্রতি পরিচালকদের দরদ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।

আর কোম্পানি যতোদিন নিজ কোম্পানিকে নিজের সন্তানের মতো দরদ না করবে ততোদিন ঐ কোম্পানি ভালো হবে না আর লভ্যাংশ ও ভালো দিবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই যেসব কোম্পানির এককভাবে ২% ও সম্মিলিতভাবে ৩০% শেয়ার পরিচালকদের হাতে নাই তাদের কে বাই ব্যাক আইন করে শেয়ার কিনতে বাধ্য করা। আর এই আইনটি হয়ে গেলে আপাততো বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি ও আস্থার সাথে বাজারে টিকে থাকবে।