দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ গ্রহণে একমত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন সিনেট। করোনাভাইরাসের ফলে সর্বস্তরে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বৃহদাকার এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। খবর বিবিসি।

করোনাভাইরাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেইলআউটসহ বিভিন্ন উদ্যোগ থাকছে এ প্যাকেজে। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ ও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল এ প্যাকেজকে ‘অর্থনীতিতে যুদ্ধকালীন পর্যায়ের বিনিয়োগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মার্কিন কংগ্রেসে সম্ভাব্য এ চুক্তির প্রত্যাশায় মঙ্গলবার মার্কিন পুঁজিবাজারে শেয়ারদরে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। বুধবার ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে তার প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটে ডাও জোনসের সূচক বেড়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা মহামন্দা পরবর্তী একদিনের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

যুক্তরাষ্ট্রের এ অর্থনৈতিক প্যাকেজটি অনুমোদনের খবরে বুধবার জাপানের বেঞ্চমার্ক নিক্কেই২২৫ সূচক ৮ শতাংশ বেড়েছে। লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ উল্লম্ফন হয়েছে।

শিগগিরই প্যাকেজটি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করবে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্যাকেজটিতে যা যা থাকতে পারে তার মধ্যে রয়েছে; করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে চাকরিচ্যুতদের আর্থিকভাবে সহায়তা, বেকারত্ব সহায়তা তহবিল ২৫ হাজার কোটি ডলার নির্ধারণ করা এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৩৫ হাজার কোটি ডলারের জরুরি তহবিল গঠন।

ম্যাককনেল বলেন, এ প্যাকেজের মাধ্যমে প্রধান শিল্প খাতগুলো স্থিতিশীল করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পেতে হিমশিম খাওয়া হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের জরুরি অর্থ প্রদান করা।

গৃহীত প্যাকেজটিকে ‘আমেরিকান ইতিহাসের বৃহত্তম উদ্ধার প্যাকেজ’ হিসেবে অভিহিত করেন সিনেট ডেমোক্রেটিক লিডার চাক শুমার। এদিকে পৃথকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার এক ঘোষণায় ইস্টার সানডের মধ্যে অর্থনীতিকে পুনরায় চালুর ইঙ্গিত দেন।

প্রণোদনা প্যাকেজের সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় ফিডেলিটি ইন্টারন্যাশনালের বিনিয়োগ পরিচালক টম স্টিভেনসন বলেন, এটি একটি সুসংবাদ, তবে আমরা এখনো বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে শেয়ারবাজারে যে মারাত্মক অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেদিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। শুধু চলতি মাসেই ডাও জোনস সূচকের ১৩৫ বছরের ইতিহাসে পাঁচটি বৃহৎ উল্লম্ফন ও পতন দেখা গেছে।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনেক দেশই এখন এ রকম প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে। তবে এ পরিকল্পনাগুলো বিনিয়োগকারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।

আমেরিকান কর্মী ও ব্যবসাগুলো উদ্ধারে গৃহীত মার্কিন এ উদ্ধার প্যাকেজ পাস করতে পাঁচদিন তীব্র আলোচনা চালিয়েছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদরা। উদ্ধার প্যাকেজটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ ও রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে পাস হতে হবে। তারপর সেখানে স্বাক্ষর করবেন ট্রাম্প।

এদিকে করোনাভাইরাসের সামনে দাঁড়িয়ে অর্থনীতি চাঙ্গায় এরই মধ্যে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ।

গত সপ্তাহে এক পূর্বাভাসে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মানিউচিন আশঙ্কা করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব ২০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপি ২৪ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে, যা ১৯৫৮ সালের রেকর্ড ১০ শতাংশকে ছাড়িয়ে যাবে।