দেশ প্রতিক্ষণ, বরিশাল: মরণঘাতি নভেল করোনাভাইরাসকে পুঁজি করেছে অর্থ বাণিজ্যে মেতেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানা পুলিশ। কীর্তনখোলা নদীর পূর্বতীর সদর উপজেলার চরকাউয়া গ্রামের বাসিন্দা জনৈক ফ্রান্স প্রবাসীর গ্রামের অবস্থানের খবরে তার বাড়িতে বেশ কয়েক দফা হানা দিয়ে তৈরি করেছে আতঙ্ক।

অন্তত তিনবার তল্লাশি চালানোর পরেও প্রবাসী যুবক সিদ্দিক রব খানকে বাসায় না পেয়ে তার মামী বাড়ি লুকিয়ে রাখার খোড়া অভিযোগ তোলে। সর্বশেষ সেখানেও তল্লাশি চালিয়ে প্রবাসী যুবককে না পেয়ে তার পুরো পরিবারকে হেনস্তা করাসহ এখন হয়রানি ও নানা ভয়ভীতির ওপরে রেখেছে।

এবং যুবকের পরিবারের কাছে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করছে পুলিশ। অথচ নিশ্চিত হওয়া গেছে প্রবাসী সিদ্দিক এখনও ফ্রান্সে অবস্থান করেছেন। এমনকি পরিবারের হয়রানির একদিন আগে ফ্রান্স বরিশাল বিভাগীয় সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেখানকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে তিনি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন, যা সংবাদে ওইদিন প্রচার করে।

দেশের এই সংকটময় মূহূর্তে প্রবাসীর পরিবারকে জিম্মি করে ওসির উৎকোচ দাবির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে জোর আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। থানা পুলিশের এমন প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকায় সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু থানার ওসির এই চাঁদাবাজির বিষয়টি সম্পর্কে বরিশাল পুলিশের উচ্চমহল অবগত হলেও দায়িত্বশীল মহলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন।

প্রবাসীর স্বজনেরা জানায়, গত ২৪ মার্চ সকালে আকস্মিক একদল পুলিশ চরকাউয়া গ্রামে তাদের বাড়িতে হাজির হয়ে প্রবাসী সিদ্দিককে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এসময় আব্দুর রব বাইরে বেড়িয়ে এসে সিদ্দিক ফ্রান্সে অবস্থান করছেন জানিয়ে দিলে পুলিশ চলে যায়। কিন্তু একদিন পরে ফের বন্দর থানার ওসিসহ এক পুলিশ সদস্য ফের বাসায় এসে প্রবাসীকে খুঁজতে থাকে।

প্রবাসীর পরিবারের অভিযোগ- এসময় তারা খোঁজা-খুঁজির একপর্যায়ে সিদ্দিককে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ তুলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করলে প্রবাসীর কলেজ পড়ুয়া ভাগনি মোবাইলে তা ধারণ করার প্রস্তুতি নেন। এসময় পুলিশ সদস্য হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে নেন। পরে ওসি সেই মোবাইল ফোনটি সকলের উপস্থিতি আছড়ে ভেঙে ফেলেন।

এবং সিদ্দিককে পার্শ্ববর্তী প্রবাসী মামার বাড়িতে লুকিয়ে রাখার ফের অভিযোগ তুলে পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ওসি। কিন্তু দাবি করা টাকা না পেয়ে ওসি প্রবাসীর পিতাকে বেঁধে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। কিন্তু তিনি এখানেই ক্ষ্যান্ত দেননি। পরবর্তীতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে মামার বাড়িতে খুঁজতে গিয়েছেন এবং প্রবাসীর মামীর সাথে রুঢ় আচারণ করেন।

করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে পুলিশের এই হয়রানি ও অর্থ বাণিজ্যের কাহিনী গোটা গ্রামবাসীকে হতবাক করেছে। অনেকেই হয়েছেন সংক্ষুব্ধ। কিন্তু ওসি পিছু হঠায় পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিরব থাকলেও প্রবাসী ভিডিও চ্যাটে বরিশালে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

অভিন্ন দাবি জানিয়ে ভিডিও চ্যাটে প্রবাসী সিদ্দিক রব এ প্রতিবেদককে জানান, করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে গ্রামে ফেরার একটি ভেগ খবর ছড়িয়ে বন্দর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বেশকিছু দিন ধরে তার বাবার কাছে অর্ধলক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। নতুবা তাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে আসেননি জানিয়ে দেওয়ার পরেও সমূহ অর্থ দাবি করেন এবং ২৪ মার্চ তিনিসহ পুলিশ সদস্যকে বাড়িতে হাজির হন।

এসময় ফের সিদ্দিকের অবস্থান ফ্রান্সে জানানো হলে ওসি গালি-গালাজ শুরু করলে তখন অনার্স পড়ুয়া ভাগিনি মোবাইলে ভিডিও করার প্রস্তুতি নেন। দুর থেকে এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে পুলিশ সদস্য মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে ওসির হাতে দেন এবং ওসি তা আছড়ে ভেঙে ফেলেন। এর পরে আরেক দফা বাসায় তল্লাশি চালিয়ে খুঁজে না পেয়ে সর্বশেষ মামার বাড়ি সিদ্দিক বাজারে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ তোলেন।

কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে তল্লাশি চালিয়েও ব্যর্থ হন এবং মামীকে হেনস্তা করেন। প্রবাসী সিদ্দিক রব এই ঘটনায় ওসির শাস্তি দাবি করে বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রবাসীর এমন বক্তব্যে বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুদ্দিন খানের কাছে জানতে চাইলে এবার তিনিও বিস্মিত হন। এবং পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখার বিষয়টি জানিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন- তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে প্রবাসীর পরিবারকে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্দিকের বাসায় দু’বার গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে খুঁজে না পেয়ে পরে তার মামার বাসায়ও পুলিশ পাঠানো হয়। শেষে মুঠোফোনে ভিডিও চ্যাটে কথা বলা পরে প্রবাসীর ফ্রান্সে অবস্থান নিশ্চিত হলে পুলিশ সেখানে আর যায়নি।