দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাস আতঙ্কে মার্চ মাসজুড়ে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটেছে দেশের শেয়ারবাজারে। ফলে তালিকাভুক্ত প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। এতে মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। মার্চের দরপতনে শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকেই প্রায় তিন’শ কোটি টাকা হারিয়েছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১০টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে মার্চ মাসে ৯টি কোম্পানিরই শেয়ারের দরপতন হয়েছে। সম্মিলিতভাবে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে ২৯৪ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তবে পতনের বাজারে শুধু ইনটেকের শেয়ার দাম বেড়েছে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের সব শেয়ারবাজারেই টালমাটাল অবস্থা। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও এর ব্যতিক্রম না। শুধু করোনাভাইরাস আতঙ্কে সরকারের পক্ষ থেকে নানা সুবিধা দেয়ার পরও শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

তাদের মতে, করোনাভাইরাস যেভাবে সারাবিশ্বে ত্রাস ছড়াচ্ছে তাতে শুধু শেয়ারবাজার না সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন চিন্তাভাবনা থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হয় তো আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সে কারণে হয়তো অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরা উচিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে অবশ্যই পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তথ্য পর্যালোচনা দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে মার্চে বিনিয়োগকারীরা সব থেকে বেশি লোকসান হয়েছে এডিএন টেলিকম থেকে। মার্চজুড়ে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৯ টাকা ২০ পয়সা। এতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারদের সম্মিলিতভাবে লোকসান হয়েছে ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

এরপরেই রয়েছে জিনেক্স ইনফোসিস। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমার কারণে শেয়ারহোল্ডাররা হারিয়েছেন ৫৯ কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। মার্চে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা। সম্মিলিতভাবে শেয়ারহোল্ডারদের ৫৬ কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ টাকা লোকসানের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানটি দখল করেছে আইটি কনসালটেন্টস। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

এছাড়া আমরা নেটওয়ার্কে ২৯ কোটি ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার, ড্যাফোডিল কম্পিউটারে ২৮ কোটি ৪৫ লাখ, বিডিকমে ১৮ কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার, আমরা টেকনোলজিতে ১৬ হাজার ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ, অগ্নি সিস্টেমে ১৫ কোটি ৯৬ লাখ ২৩ হাজার এবং ইনফরমেশন সার্ভিসেসে ১০ কোটি ৫৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা হারিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, করোনাভাইরাস যেভাবে প্রকোপ ছড়াচ্ছে তা সার্বিক অর্থনীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কতোদিন করোনাভাইরাসের এ তাণ্ডব চলবে তা বলা যাচ্ছে না। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না তা নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ আছে। যা সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।সুত্র: জাগো