দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাসে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যেকোনো পেশার যারাই কোনো ধরণের সুবিধাবাদী আচরণ করে তারা রাজাকারের চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয় সমাজসেবক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ফেসবুকে ব্যারিস্টার সুমনের নিজস্ব পেজের লাইভ ভিডিওতে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক একটি লাইভ ভিডিওতে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সকলেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তবে তাকে আইনের মুখোমুখিও করা যাবে। বিশেষ করে ডাক্তারদের লক্ষ করে তিনি বলেন, ডাক্তাররা একটি মহান পেশায় যুক্ত আছেন। এমন একটি পেশায় থেকে অবশ্যই তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। কারণ ইদানিং শোনা যাচ্ছে অনেক রোগীরাই বিশেষ করে সাধারণ জ্বর ও সর্দি-কাশি আক্রান্ত রোগীরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।

ব্যারিস্টার সুমন গত রোববার রাজধানী ঢাকার মুগদা এক হাসপাতালে মো. আলমাস উদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার বিষয়টি তুলে এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, এভাবে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যেতে থাকলে ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাওয়া’র চেয়ে বিনা চিকিৎসায় মানুষ বেশি মারা যাবে।

ব্যারিস্টার সুমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনাভাইরাস এর এই ক্রান্তিলগ্নে ডাক্তারদের মধ্যে যারা সুবিধাবাদী আচরণ করবে এবং এই বিপদের সময় দায়িত্বে অবহেলা করবে তারা রাজাকারের চেয়েও খারাপ বলে বিবেচিত হবেন। কারণ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার-আলবদররা নিজেরা বাঁচতে সুবিধাবাদী আচরণ করেছিলো।

তিনি বিদেশের ডাক্তারদের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বিদেশে ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের সবটুকু বিলিয়ে দিচ্ছে এমনকি অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তাররা সরকারের কাছে অনুরোধ করতেছে তাদেরকেও যেন চিকিৎসা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

তাই ডাক্তারদের কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সবাই যেন নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে মানুষকে নির্ভয় দেয় এবং যে কোন জ্বর কাশিকেই করোনা আক্রান্ত মনে না করে। কারণ এভাবে যে কোন জ্বর কাশিকেই করোনা আক্রান্ত মনে করলে এবং চিকিৎসা দিতে অবহেলা করলে মানুষ বিপদে পড়ে যাবে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধরা পরার পর থেকেই হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রামিত রোগ হওয়ায় ডাক্তাররা যে কোন জ্বর কাশির রোগীকেই করোনা সন্দেহে চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছে। যাতে করে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় অন্যান্য রোগেও মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন আগে এভাবেই করোনা সন্দেহে চিকিৎসা না পেয়ে মো. আলমাস উদ্দিন নামে এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।

৬৮ বছর বয়সী আলমাসের মৃত্যুর আগে তার পরিবার চার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনা সন্দেহে কোনো হাসপাতালই তাকে ভর্তি করেনি। আলমাস উদ্দিনের বড় ছেলে আরিফ হাসানের অভিযোগ, শনিবার ভোরে তার বাবা বাসাবোর নিজ বাসায় ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

এর পর তাকে বারডেম হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতাল ও কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হলে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোনো হাসপাতালই ভর্তি করতে রাজি হয়নি। ‘পরে রাত ১২টায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হলেও ততক্ষণে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় রোববার সকালে সেখানেই মারা যান বাবা।’

মৃত্যুর পর ডেথ সার্টিফিকেটেও ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান আরিফ। রোববার বাদ জোহর বাসাবো মাঠে জানাজার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মাদারটেক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।