দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলার সড়ক-মহাসড়কে সোমবার পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, ট্রাক অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসকের গাড়ি ছাড়াও কিছু রিকশা-অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। জেলার সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে ১৪টি চেকপোস্ট বসালেও নানা অজুহাতে মানুষ চলতে চেষ্টা করছে।

এরই অংশ হিসেবে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ এবং ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণার পর রাজধানীজুড়ে তৎপরতা বেড়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের। আজ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি প্রধান সড়ক পেরিয়ে, পাড়া-মহল্লার গলিতেও সেনা সদস্যদের বাড়তি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা-চৌরাস্তা এলাকায় সোমবার সকালে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকার জমিলা খাতুন। সকালে তার বাবার মৃত্যু খবর পেয়ে তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু দুই-একটি অটোরিকশা ছাড়া যাত্রীবাহী কোনো গাড়ি চলছে না। অন্যদের সঙ্গে পিকআপে উঠলে কিছুদূর যাওয়ার পরই পুলিশ সকলকে নামিয়ে চালকসহ পিকআপটি নিয়ে গেছে। ফলে হেঁটেই রওনা হচ্ছি। জানি না, বাবার মুখ দেখতে পাব কীনা?

শ্রীপুরের ধনুয়া এলাকার রিদিশা নিট কারখানার শ্রমিক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় একটি মেসে থেকে কারখানায় কাজ করি। কিন্তু কারখানা বন্ধ দেয়ার পর বুয়াও চলে যায়। এতে থাকা-খাওয়ার কষ্টের কারণে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হই। শ্রীপুরের নয়নপুর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে জৈনাবাজার পর্যন্ত হেঁটে গিয়েও কোনো গাড়ি পাইনি। তাই চিন্তা করছি থেমে থেমে হেঁটেই গন্তব্যে যাব।

সোহেল নামের অপর এক শ্রমিক জানান, প্রথম বন্ধের সময় খোলা ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। ৪ এপ্রিল কারখানা খোলার খবরে আবার এলেও ওইদিনই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এখানে বসে বসে খাওয়ার চাইতে পরিবার-পরিজনদের সময় দিতে আবার বাড়িতে যাচ্ছি। এখন কোনো ট্রাক-পিকআপ আমাদের তুলছে না। ময়মনসিংহ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া সম্ভব না বিধায় গাড়ির অপেক্ষা করছি।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রাসেল জানান, পুরো গাজীপুরে বাইরের কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। এজন্য গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর, শ্রীপুরের জৈনা বাজার, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা (স্কয়ার কারখানার সামনে) এবং কালীগঞ্জের উলুখোলা এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাতে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া অন্যকোনো গাড়ি গাজীপুর ও গাজীপুর হয়ে ঢাকায় ঢুকতে না পারে এবং বাইরে যেতে না পারে। তবে কোনো জরুরি কাজে কেউ যদি নিজস্ব গাড়িতে তাদের গ্রামের বাড়ি যেতে চান সেক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হচ্ছে।

তবে দুই শ্রেণির মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একটি হলো নিম্নশ্রেণি-পেশার মানুষ, অন্যরা হলো উচ্চ শ্রেণির মানুষ। নানা অজুহাতে তারা গাড়ি নিয়ে বাইরে চলতে চেষ্টা করছেন।

নিম্নশ্রেণির লোক টাকা বা খাবারের প্রয়োজনে রোজগারের জন্য বাইরে চলতে দেখা গেছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সোমবার সকালে গাজীপুর সদর এলাকায় এক উচ্চবিত্তের গাড়ি আটক করলে তিনি বলেন, তার পোশাক কারখানায় পিপিই, মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে সেখানে তাকে যেতে হবে।

অপর এক যাত্রী প্রাইভেটকারে স্বপরিবারে বের হয়েছেন ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে। পরে চিকিৎসা পত্র যাচাইকালে দেখা গেছে তাতে ফ্লুইড দিয়ে দুই বছর আগের তারিখ মুছে হাল সনের তারিখ লিখে নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে অন্য কাজে।

হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিওনের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাদির জিলানী বলেন, মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে কয়েকটি চেকপোস্ট বসিয়ে হাইওয়ে পুলিশ রাজধানীমুখী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন। যারা নির্দেশনা মানছেন না বা আইন ভঙ্গ করছেন ওইসব যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার পীযূষ কুমার দে জানান, গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে উপরোল্লেখিত যানবাহন ছাড়া যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন চলছে না। চলতে গেলে তা আটকে দেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। তারপরও কিছু মানুষ ঘর ছেড়ে পথে চলছে। আসলে করোনা সংক্রমণের জন্য মানুষের মাঝে যতটুকু সচেতনতা থাকা দরকার তা নেই। এখনও এক শ্রেণির লোক মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ে খালি রাস্তায় ঘুরতে বেড়ায়। পিকআপে উঠে দূর-দুরান্তে যাওয়ার চেষ্টা করে। সকালে এরকম কিছু যানবাহনের চালককে সতর্ক ও সচেতন করা হয়েছে এবং কয়েকটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, মহানগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টঙ্গীর স্টেশনরোড, গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, চান্দনা-চৌরাস্তা, বিআরটিসি ক্রসিং, শিববাড়ি, রাজবাড়ি, কোনাবাড়ি ও রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

অপ্রয়োজনীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে এখনও কিছু লোক শাখা সড়কে অটোরিকশা, সিএনজি চলার চেষ্টা করছে। তবে কাঁচা বাজার, জরুরি চিকিৎসা, ব্যাংকিং বা কারখানার কথা বলে নানা লোকজন চলাচল করছে। তবে আমাদের এসব ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি হতে হবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাঁচা বাজারও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রেখে মানুষ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।