দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবার প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এ দ্বন্দ্বের মূল কারণ স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক (নতুন সদস্যপদ) নিয়ে। লেনদেন সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রত্যাহারের জন্য সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে সংগঠনটি।

এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে ডিএসইর পর্ষদকে বিতারিত করার হুমকি দেয়া হয়েছে। ডিবিএ’র সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইনের পক্ষে রোববার আহসানুল করিম এ নোটিশ পাঠান।

উল্লেখ্য, ২৪ মার্চ শেয়ারবাজারে লেনদেন সংক্রান্ত ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট’ বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ম অনুসারে জনমত যাচাইয়ের জন্য এটি দিতে হয়। এ হিসাবে নীতিমালার ওপর কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে সাত দিনের মধ্যে বিএসইসিকে জানানোর কথা।

ফলে নীতিমালার ব্যাপারে আপত্তি নেই বলে মতামত জানিয়ে দিয়েছে ডিএসই। তবে সরকারি ছুটির কারণে মতামত পাঠানোর জন্যও সময় বাড়ানো হবে বলে কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে। ব্রোকারদের সংগঠনটি মনে করছে, বিধিমালায় এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা শেয়ারের জন্য ইতিবাচক নয়। এজন্য মতামত স্টক এক্সচেঞ্জের মতামত প্রত্যাহার করতে বলেছে।

ডিবিএর নোটিশে বলা হয়, বিএসইসি খসড়া ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট’ বিধিমালা জারির জন্য মন্তব্য চেয়ে ৪ মার্চ চিঠি দেয়। ৮ মার্চ ডিএসই সেটি হাতে পায়। কিন্তু এরপরই সম্মতি জানায়।

কিন্তু বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে পুরো শেয়ারবাজারে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এটি জানার পরও স্টক এক্সচেঞ্জ একে সমর্থন দিয়েছে। নোটিশে আরও বলা হয়, খসড়া বিধিমালার দফা ৩, ৪, ৫, ৬ এবং ৮ বিধিসম্মত না হওয়া সত্ত্বেও ডিএসই সম্মতি জানিয়েছে।

এছাড়া বিএসইসির এ জাতীয় কোনো কাঠামো গঠনের কোনো অধিকার নেই। একই সঙ্গে বিএসইসির বিধিগুলোর বিষয়বস্তু ও নতুন ট্রেক আবেদনকারীর জন্য ফি নির্ধারণ করা কেবল বিপর্যয়ের কাজ। এছাড়া বিএসইসির এ জাতীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে ট্রেকহোল্ডার নির্বাচনের যোগ্যতা নির্ধারণের কোনো অধিকার নেই।

বিএসইসি আইনি এখতিয়ার ছাড়াই খসড়া-বিধিমালা তৈরি করেছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। যেখানে কমিশন ফি, সিকিউরিটি ডিপোজিট এবং ট্রেক ইস্যুর সময় উল্লেখ করেছে। কিন্তু ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে বিএসইসিকে এ ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এসব নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এবং অনুমোদন করবে কমিশন।

এ পরিস্থিতিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে খসড়া ট্রেক বিধিমালা সম্পর্কে একটি প্রতিবাদ জানিয়ে কমিশনে ইমেইল বা অন্য কোনোভাবে নোট পাঠানোর জন্য লিগ্যাল নোটিশে অনুরোধ করা হয়েছে।

ডিএসই এ নোট পাঠাতে ব্যর্থ হলে, কৌশলগত বিনিয়োগকারীসহ সাধারণ সদস্যরা পর্ষদের সবাইকে বিতারিত করার জন্য বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করবে। এছাড়া বিতারিত সত্ত্বেও বিএসইসি বিধিমালাটি বাস্তবায়িত হলে, বিধিমালাটির বিষয়ে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা বলা হয়েছে।

বিএসইসির প্রকাশিত খসড়া বিধিমালায় বলা হয়- কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশনের অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক (সদস্য পদ) কিনতে পারবেন। এই ট্রেক পাওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা ফিসহ এক্সচেঞ্জে আবেদন করতে হবে। আর ৫ লাখ টাকা দিতে হবে নিবন্ধন ফি হিসেবে। অর্থাৎ ৬ লাখ টাকায় গ্রাহকদের পক্ষে শেয়ার লেনদেন করে দেয়ার ব্যবসা করতে ট্রেক পাওয়া যাবে। তবে এই ট্রেকের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার হবেন না।

শুধু শেয়ার লেনদেনের সুযোগ পাবেন। ট্রেকহোল্ডারকে প্রতি বছর ১ লাখ টাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে ফি দিতে হবে। ট্রেক পাওয়ার জন্য পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা।

এছাড়া সার্বক্ষণিক নিরীক্ষিত নিট সম্পদের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে। আর স্টক এক্সচেঞ্জে ২ কোটি টাকা বা কমিশনের সময় নির্ধারিত অর্থ জামানত হিসেবে রাখতে হবে। অর্থাৎ ৬ লাখ টাকায় ট্রেক পাওয়ার জন্য আরও কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা থাকতে হবে।